দোয়াত / Doyat

দোয়াত এর মূল বিষয় হল সাহিত্য। না না সাহিত্য শুনে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। দোয়াত এমন এক জায়গা যেখানে নিজের মনের ভাব কাগজ কলমে প্রকাশ করা সম্ভব। লিখতে পারেন নিজস্ব যেকোনো লেখা, কবিতা, ছোট গল্প, ধারাবাহিক গল্প বা ছোট উপন্যাস। তবে এগুলো একেবারেই স্বরচিত হতে হবে যা সকলকে যথেষ্ট আকর্ষণ করবে। লেখার বিষয় যেকোনো কিছুই হতে পারে, কিন্তু বিষয়ের দিকে নজর রাখাটাও বাঞ্ছনীয়। কথায় বলে:- "Pen is mighter than sword" এ যেন কলমের ধার - তলোয়ারের বাড়। "কলমের কালি রাখি দোয়াতে ভরে।" মনের ভাব, ভাবনার তরঙ্গ, হৃদয়ের উচ্ছ্বাস-না বলা বেদনা দোয়াতের কালিতে আখরে আখরে ফুটিয়ে তুলি যা খুশি কবিতা আর গল্প। আহা নাই হলো সাহিত্যের পর্যায়ে - আমরা তো করলাম প্রকাশ - মেটালাম আশ। তোমরাও করো যদি চেষ্টা, কথা দিলাম - "ভ্রমর আনবে প্রকাশে দোয়াতের প্রাবরণে"

বিসর্জন

‌‌টেবিলের উপর রাখা ফোন টা হঠাৎ বেজে উঠল। অদৃজা রান্না ঘরে ছিল, ও ওখান থেকেই চেঁচিয়ে বলল-- “ তিথি তোর ফোন...” তিথি: হ্যাঁ বলো (ফোন রিসিভ করে) তিথির মা: কি রে কোথায় থাকিস বলতো? এতক্ষণ ধরে ফোন করেছি ধরছিলি না কেন? তিথি: উফ্ মা! আমি exercise করছিলাম, রোজ তো এই সময়েই করি জানো না? তিথির মা: আচ্ছা, আচ্ছা শোন তোর মামা ফোন করেছিল, এ বছর নাকি খুব ধুমধাম করে পুজো হবে, তুই কবে যাবি বলতো? তিথি: মা! আবার?? এতক্ষণে অদৃজা বেরিয়ে এসেছে রান্নাঘর থেকে, হাতে ফ্রুট জুস, তিথি এই সময় খায়। অদৃজা: কে রে? কাকিমা? আমায় দে না রে প্লিজ! তিথি: হ্যাঁ, দাঁড়া। মা, অদৃজা তোমার সাথে কথা বলবে, নাও। অদৃজা: হ্যালো, কাকিমা কেমন আছো? তিথির মা: হ্যাঁ, রে ভালো আছি। তুই কেমন আছিস্? অদৃজা: খুব ভালো। তিথির মা: শোন না রে মা, তুই একটু তিথি কে বোঝা না রে, দেখ ওর মামা, মামি, দিদা সবাই কত করে বলছে ওকে ওখানে যাওয়ার জন্য, ও তো কিছুতেই শুনছে না। অদৃজা: আচ্ছা কাকিমা, তুমি চিন্তা করো না। আমি ওকে ঠিক রাজি করাবো, এখন রাখি? তুমি সাবধানে থেকো। অদৃজা: তিথি, তোর সাথে একটু কথা ছিল... বলছি... তিথি: ব্যাস এবার তুইও শুরু করবি তো! দেখ অদৃ আমার ভালোলাগে না ওখানে যেতে, তুই তো জানিস্। ওখানে চারিদিকে দাদুর স্মৃতি, আমার মন খারাপ করে। জুসের গ্লাসটা টেবিলে রেখে খাটের উপর অদৃজার মুখোমুখি বসল তিথি। আবার বলল, ছোটবেলা থেকে প্রতি বছর পুজোর সময় আমি মামাবাড়ি যেতাম। বিশ্বাস কর, সারাবছর অপেক্ষা করে থাকতাম। দাদুর সাথে পুজোর বাজার করা, একসাথে কাশফুল তোলা, মায়ের আগমনী গান শোনা, পুজোর কদিন খাওয়ার কি কি মেনু হবে সব আমরা একসাথে ঠিক করতাম। দাদু মারা যাওয়ার পর পুজোর আনন্দ টা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে রে। ( তিথি মুখ নিচু করে বসে রইল) অদৃজা: আমি বুঝতে পারছি তোর কষ্টটা, কিন্তু মানুষ তো আর চিরদিন বেঁচে থাকে না। আর ওখানে তো তোর দিদা, মামা, মামি, দাদা, বোন সবাই আছে। সবাই তোকে কত ভালোবাসে বলতো? কাকু, কাকিমাও তো যাচ্ছেন। তিথি: (বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল) ঠিক আছে, আমি যাব। কিন্তু একটা শর্ত আছে, তুই ও যাবি আমার সাথে। বল রাজি? অদৃজা: আমি?? আমি ওখানে গিয়ে কি করব? তিথি: আরে? কি আবার করবি? পুজো হবে আমরা সবাই আনন্দ করব একসাথে। তোকে ছাড়া আমি কিন্তু যাব না। অদৃজা: আচ্ছা ঠিক আছে, আমি যাব। তিথি আর অদৃজা দুজনেই যাদবপুর থেকে ইংলিশে এম.এ করছে। একই রুমে থাকে। দুবছরে ওদের মধ্যে এত গাঢ় বন্ধুত্ব হয়েছে দুজন দুজন কে ছাড়া কোথাও যায় না। অদৃজা জলপাইগুড়ির মেয়ে, এইচ্.এস এর পর যাদবপুরে ভর্তি হয়। তিথির বাড়ি বাঁকুড়া। তিথির মামাবাড়ি মেদিনীপুর থেকে ১০০ কিলোমিটার ভিতরে রাধামোহনপুর গ্রামে। সেখানে ওর দাদুর দাদু ছিলেন জমিদার। এখন যদিও সেরকম কিছুই নেই, তবে গ্রামের সবাই ওর দাদুকে খুব মান্য করত। প্রতি বছর খুব ঘটা করে পুজো হয়, পুজোর কদিন ওই বাড়িতে ভোজ বসে। ১৫০ বছরের পুরোনো পুজো। তবে তিথির দাদু মারা যাওয়ার পর গত পাঁচ বছর আর সেরকম জাঁকজমক হয় না। এবার যদিও মামারা খুব উদ্যোগ নিয়েছে। তিথি: অদৃ তোর মন খারাপ করছে না তো? অদৃজা: মন খারাপ করবে কেন? তিথি: এই যে কলকাতার পুজো ছেড়ে কোন এক দূর গ্রামের পুজো দেখতে যাচ্ছিস... আজ পঞ্চমী, চারিদিকে কতো আয়োজন, (আরও বলতে যাচ্ছিল তিথি, কিন্তু অদৃজা ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল) অদৃজা: তিথি, মজা করছিস আমার সাথে? আরে কলকাতার পুজো তো দেখেছি ৪ বছর ধরে, সত্যি কথা বলতে বনেদি বাড়ির পুজো দেখার আমার অনেক দিনের শখ। আর সারাবছর এই ব্যস্ত শহরকে দেখেছি, পুজোর সময় একটু নিরিবিলি ভালোই লাগবে। কি বল?? তিথি: হুম... তা ঠিক। পুজোর সময় অদৃজা কেমন মনমরা হয়ে থাকে তিথি সেটা লক্ষ্য করেছে। পুজোর সাথে ওর কোনও একটা খারাপ স্মৃতি আছে, কিন্তু বলেনা কখনো। তিথি ও জোর করে না। তবে কোনো একটা আঘাত যে অদৃজার মনকে ছেয়ে আছে সেটা ও বুঝতে পারে। গাড়ি চলছে, দুজনে কখনো রাস্তার দুধারের কাশফুল দেখছে, কখনো তিথি ওর মামাবাড়ির কথা বলছে অদৃজা কে। দেখতে দেখতে সূর্য যখন প্রায় মাথার উপর তখন ওরা পৌঁছালো রাধামোহনপুরে। গাড়ি থেকে নামতেই বাড়িতে হইচই পরে গেল। তিথির মা, বাবা সকালেই এসেছে। ওরা এসেছে শুনে বাড়ির সবাই ছুটে এল। তিথি একে একে সবার সাথে অদৃজার পরিচয় করিয়ে দিল। বড়মামা, মেজমামা, ছোটমামা, বড়মামার দুই ছেলে শাশত্ব, সাগ্নিক, দুজনেই তিথির থেকে বয়সে বড়। মেজমামার এক ছেলে তিথির প্রায় সমবয়সী নীলাভ, কলকাতায় থাকে, আর দুই মেয়ে- কনক আর দূর্বা, তিথির থেকে ছোট। ছোটমামার একটাই মেয়ে বিথি। শাশত্বর বৌ চন্দ্রিমা। বৌদির সাথে তিথির খুব ভাব। আর ওদের মেয়ে মিঠু বাড়ির সবচেয়ে ছোট সদস্যা। সব মিলিয়ে জমজমাট পরিবার। সবার সাথে কথা বলে ওরা দিদার সাথে দেখা করতে গেল দিদার ঘরে। দিদা: (কান মুলে দিয়ে তিথি কে বললেন) তুই কী রে? এই বুড়ি টার কথা একবারও মনে পরে না? দাদুই সব, আমি কেউ না? মরেই তো যাব একদিন, দেখতেও তো আসতে পারিস মাঝে মাঝে (বলেই কেঁদে ফেললেন)। তিথির চোখেও জল চলে এল। তিথি: (দিদাকে জড়িয়ে ধরে বলল) এরকম বলছো এখন বলতো? এইতো আমি এসেছি দেখো পুজোই খুব মজা করব সবাই মিলে। ও দিদা ও আমার বান্ধবী অদৃজা। অদৃজা এতক্ষণ একটু দূরে দাড়িেয় ছিল এবার কাছে এল। দিদা: বাঃ ভারী মিষ্টি মেয়ে। দিদা: যা, অনেক বেলা হয়েছে, তোরা স্নান সেরে ঠাকুর দালানে যা। ওরা দুজনে স্নান করে ঠাকুর দালানে গিয়ে উপস্থিত হল, সেখানে মায়ের দশ হাতে দশ রকমের অস্ত্র সাজানো হচ্ছে, বাড়ির অন্য সদস্য রাও আছে সেখানে। তিথি: মেজমামি! নীলাভ আসেনি? মেজমামি: ওর তো আজকেই আসার কথা। তোর সাথে কথা হয়নি? তিথি: আমি ওকে কত বার বললাম আমরা একসঙ্গে আসব, কিন্তু তোমার ছেলে এত ব্যস্ত, তার কীসব কাজ আছে। অদৃজা:আচ্ছা মাকে গহনা কখন পড়ানো হবে?? বড়মামি: সন্ধ্যা বেলায়। মিঠু: অদৃজা পিপি চলো তোমাকে বাড়িটা ঘুরে দেখিয়ে আনি। ছোটমামি: হ্যাঁ, সেই ভালো, তবে বেশি দেরি করো না। তিথি: আচ্ছা মামি, আমরা তাড়াতাড়ি চলে আসব। চল অদৃ। আসতে আসতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হল, সন্ধ্যা বেলা মাকে গহনা পড়ানো হল। বৌদি, কনক, দূর্বা, তিথি, অদৃজা, মিঠু সবাই একসাথে বসে কত গল্প, হইহই... এই অল্প সময়ে বাড়ির সবার সাথে অদৃজা বেশ মিশে গেছে। অদৃজার বাড়িতে বাবা আর মা, ওদের ছোট পরিবার। এত বড় পরিবার, সবাই এত ভালো ওর মনটাই আনন্দে ভরে গেছে এখানে এসে। এরকম পঞ্চমী প্রথম বার কাটালো সে। ভোরবেলা ঘুম ভেঙে গেল অদৃজার ঢাকের শব্দে। ফোন হাতে নিয়ে দেখল সাড়ে পাঁচটা বাজে। তিথি কে ডেকে বলল- অদৃজা: এই তিথি ওঠ! আজ তো মায়ের বোধন হবে। কত কাজ! তাড়াতাড়ি ওঠ! দুজনে ওঠে চটপট রেডি হয়ে ঠাকুর দালানে গেল, বাড়ির বড়রা সবাই আছে। পুজোর জোগাড় চলছে, ওরাও হাত লাগালো। আস্তে আস্তে বেলা বাড়তে লাগলো। গ্রামের লোকজন আসতে লাগলো। লুচি, আলুর দমে গন্ধে বাড়ি মম করছে। মায়ের বোধনের পুজো শেষ হল, প্রসাদ বিতরণ চলছে এমন সময়- দূর্বা: ওই তো! দাদা চলে এসেছে। তোর এখন আসার সময় হল? তিথি: তোর বাড়ির পুজো, আর তুই এখন আসছিস্? নীলাভ: আর বলিস না, এই রণ টার জন্য। কিন্তু তুই বল তোর কী খবর? ৫ বছর পর মামাবাড়ির কথা মনে পড়ল? তিথির মা: আচ্ছা সব কথা কি বাইরে দাঁড়িয়েই বলবি, আগে ভেতরে আয় মা কে প্রণাম কর। গল্প করার অনেক সময় আছে। নীলাভ: হ্যাঁ, ঠিক বলেছ। কিন্তু এই রণ টা আবার কোথায় গেল? রৌণক: এই তো, আছি আছি। আরে মা ফোন করেছিল তাই কথা বলছিলাম। নীলাভ: আয়, আয়.... তিথি ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড রণ মানে রৌণক। আমরা একসাথে এম. এস সি করছি, একই মেসে থাকি। তিথি: ও আচ্ছা, তাহলে তোমার জন্য নীলাভর এত দেরি হল আসতে? রৌণক: আসলে একটা কাজ পরে গিয়েছিল, কিন্তু খুব বেশি দেরি হয়নি। অদৃজা সবাই কে প্রসাদ দিয়ে দুটো প্রসাদের প্লেট নিয়ে ওদের দিকে যাচ্ছিল, কিছুটা যাবার পর সে থমকে দাঁড়ালো, নিজের চোখকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না। সে ঠিক দেখছে তো? অদৃজার সারা শরীর কাঁপছে, রাগে, ভয়ে... হাতের প্লেট দুটো আর একটু হলেই পরে যেত, চন্দ্রিমা এসে প্লেট দুটো ধরল। চন্দ্রিমা- তোমার কি শরীর খারাপ করছে অদৃজা? অদৃজা: না, না সেরকম কিছু না।( অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিল সে) চন্দ্রিমা: দাও আমি দিয়ে আসছি। চন্দ্রিমা প্লেট দুটো নিয়ে চলে যেতেই অদৃজা কাউকে কিছু না বলে ওখান থেকে বেড়িয়ে বাড়ির পিছন দিকে পুকুর পাড়ে গিয়ে বসে রইল চুপ করে। এদিকে সবাই তখন রণ কে নিয়ে ব্যস্ত।। পুরনো জমিদার বাড়ি, কড়িবরগার ছাদ, খড়খড়ির জানালা, লম্বা বারান্দা। সেই বারান্দায় সবাই সারি দিয়ে খেতে বসেছে মধ্যাহ্নভোজ, এলাহি আয়োজন। তিথি, অদৃজাকে একরকম জোর করেই নিয়ে এল। তিথির মা: তোর কি কিছু হয়েছে অদৃজা? তখন চন্দ্রিমা বলছিল। অদৃজা: না, না কাকিমা, কিছু হয়নি। তিথি: মা জানো, ও এখন ও বলছে খাবে না কিছু, আমি তো জোর করে ধরে আনলাম। তিথির মা: ও মা! খাবি না কেন? অদৃজা: না, আসলে... দিদা: (এতক্ষণ চুপ করে ছিল এবার বলল) আমি কিন্তু কোনো কথা শুনবো না, চুপ করে বসে পর সবাই। ওরাও বসে পরল। রণ আর নীলাভ ও বসে খাচ্ছিল। অদৃজার গলার স্বর রণর ভীষণ পরিচিত, নাম শুনে সে ওত গুরুত্ব দেয়নি, কিন্তু এবার সে খাওয়া ফেলে তাকালো মেয়েটির দিকে। খুব অবাক হল রণ। সেই টানাটানা চোখ, ছিপছিপে চেহারা, কিন্তু মাধুর্য আছে, আর সেই মায়া ভরা মুখ। আগের থেকে একটু যেন বড় হয়েছে মেয়েটা, মনে মনে হাসলো রণ। অদৃজার দিকে রৌণক তাকিয়ে আছে দেখে তিথি বলল তিথি: ও রণ দা ও আমার বান্ধবী, অদৃজা। অদৃজা! তোকে নীলাভর কথা বলেছিলাম, ও নীলাভ আর, ও রণদা, নীলাভর বেস্ট ফ্রেন্ড। নীলাভ: Hi... তুমি অদৃজা! Nice to meet you. তিথির মুখে তোমার কথা অনেক শুনেছি। খাওয়া শেষ করে জমিয়ে আড্ডা দেব। অদৃজা: হুম। খাওয়া শেষে সবাই বসল একসাথে শুধু অদৃজা মাথা ব্যথার নাম করে ঘরে চলে গেল। তার যে সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। একা একা বিছানায় শুয়ে ভাবতে লাগলো রৌণকের সাথে বন্ধুত্ব, একসাথে কাটানো মূহুর্ত, ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা ওদের সম্পর্ক.... এসব ভাবতে ভাবতে চোখে জল চলে ওর। কলেজের 1st year এ এই রকম ষষ্ঠীর দিনেই রণ অদৃজা কে প্রপোজ করেছিল। সন্ধ্যা বেলা পুজোর সময় তিথি লক্ষ্য করল অদৃজা কেমন যেন চুপচাপ হয়ে আছে। রাতে সবাই যখন শুয়ে পড়েছে তখন তিথি অদৃজা কে জিজ্ঞাসা করল ওর কি হয়েছে? অদৃজা কেমন বাচ্চাদের মতো তিথি কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। তিথি একরকম ছেদ ধরে বসল, ও সব শুনতে চায়। অদৃজা বলতে শুরু করল রণ আর ওর সম্পর্কের কথা। সব শুনে তিথি বলল বলল তাহলে কি এমন ঘটেছিল যে তোরা আলাদা হয়ে গেলি? এদিকে রণ ও খুব চুপচাপ হয়ে আছে, সেটা দেখে নীলাভ বলল নীলাভ: তুই কার কথা ভেবে মন খারাপ করে আছিস? তনুজা? রৌণক: ধুর! না, না। চল ঘুমিয়ে পরি, কাল তোদের গ্রাম টা একটু ঘুরে দেখব। চারিদিকে লাল, আকাশে, বাতাসে ছড়িয়ে পরেছে। সবাই সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেছে... রণ সবার চোখের আড়ালে অদৃকে টেনে নিল নিজের কাছে, রাঙিয়ে দিল ওর গাল দুটো... আলতো করে চুম্বন এঁকে দিল ওর কপালে। লজ্জায় লাল হয়ে উঠল অদৃজা, ওর হার্টবিট দ্বিগুণ হয়ে গেছে। হঠাত্ ওর হাত ছেড়ে রণ আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাচ্ছে ভীড়ের মধ্যে। অদৃজা ডাকতে চাইছে কিন্তু পারছে না। এবার শুনতে পেল তিথি ওকে ডাকছে। লাফিয়ে ওঠে বসল অদৃজা বিছানার উপর... অদৃজা: রণ! এই রণ, প্লিজ যাস না। তিথি: কী বলছিস্ তুই? রণ? ও এখানে কেন আসবে? এই অদৃ? কী হল? কথা বল... অদৃজা: ( এবার আস্তে, আস্তে ঘোর কাটল, বুঝতে পারলো ও স্বপ্ন দেখছিল এতক্ষণ) হ্যাঁ, হ্যাঁ, না, মানে..... তিথি: আবার কী হ্যাঁ, না করছিস? তুই কি স্বপ্ন দেখছিলিস? অদৃজা চুপ করে বসে রইল, ফার্স্ট ইয়ারের দশমীর দিনটা ওরা যেভাবে কাটিয়েছিল, সেটাই ও স্বপ্ন দেখছিল। তিথি: আরে আবার কি ভাবছিস? দেখ আমি বুঝতে পারছি, রণদা কে তুই কতটা ভালোবাসতিস, এখনো বাসিস, কিন্তু কি আর করা যাবে যাবে বল? যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে, প্লিজ পুজোর দিনে মন খারাপ করিস না, আজ সপ্তমী, কিরে? পুজোর ওখানে যাবিনা? অদৃজা: হ্যাঁ যাবো, চল। দুজনে ঠাকুরদালানে যাচ্ছিল, হঠাৎ রণর সাথে দেখা হল। রণ: তোমরা ঠাকুরদালানে যাচ্ছ? তিথি: হ্যাঁ, তুমিও যাচ্ছ? রণ: আরে আমি নীলাভকে খুঁজছি। কোথায় যে গেল? তিথি ব্যাপারটা কিছুটা বুঝতে পেরে বলল— তিথি: রণদা তুমি চলে যাবে কেন? আজ তো সবে সপ্তমী, বাড়ির সবাই জানলে কিন্তু খুব কষ্ট পাবে। না,না তোমার যাওয়া হবেনা। (অদ্রিজা মুখে না বললেও ও যে চায় রণ থাকুক, সেটা তিথি বুঝতে পারছে, হাজার হোক মান অভিমান, তবুও ভালোবাসায় পিছুটান থেকেই যায়) রণ: আর বলোনা! একটা আর্জেন্ট কাজ এসে পড়েছে, আমাকে যেতেই হবে। তিথি: না! তোমার পুজোর মধ্যেও কি কাজ শুনি? আর তাছাড়া এ বাড়ির একটা নিয়ম আছে, মা যতদিন এ বাড়িতে থাকবেন, কেউ এখান থেকে কোথাও যেতে পারবেনা। তিথি: ওকে আজ আর খুঁজে পাবেনা, দেখো ওর বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কোথায় গিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। অদৃজা : আমি গেলাম, তোরা আয়। রণ বুঝতে পারছে অদৃজা ওর জন্য কাল থেকে আফ্সেট, মজাও করতে পারছে না ঠিকমত, এত মিশুকে মেয়েটা চুপচাপ, একা হয়ে গেছে কেমন। অদৃজা কে শুনিয়েই রণ বলল— রণ: না আসলে আমাকে আজকে ফিরে যেতে হবে। কথাটা শুনে অদৃজা দাঁড়িয়ে পড়ল, স্বপ্নের কথা মনে পড়ল ওর, ওকে ছেড়ে চলে যেতে চায় রণ, কেনই বা থাকবে? অদৃজার মত আনস্মার্ট মেয়েকে কি কারোর ভালো লাগতে পারে? কিন্তু ওর যে মন চাইছে রণ থাকুক, কতদিন পরে আবার দেখছে ওকে, রাগ হচ্ছে, কিন্তু চলে যাবে শুনে কষ্ট ও হচ্ছে। রণ: ধুর! এরকম আবার হয় নাকি ? তিথি: হয়, হয়, বিশ্বাস না হলে তুমি বড়দের জিজ্ঞেস করো। এতক্ষণে নীলাভ চলে এসেছে, অদৃজা একটু দাঁড়িয়েই ঠাকুরদালানে চলে গেছে। নীলাভ: তোরা এখানে কি করছিস? ঠাকুরদালানে চল, অঞ্জলি দিবি না? তিথি: দেখ ,তোর বন্ধু বলছে চলে যাবে। নীলাভ:কি? আজ? তোর কি মার খাওয়ার ইচ্ছা হয়েছে? রণ দেখল এখান থেকে বেরোনোর কোন উপায়ই নেই, অগত্যা ঠাকুরদালানে গেল। পুজো শেষে নীলাভ,রণ, তিথি, অদ্রিজা, কণক, দূর্বা, সবাই একসাথে ঘুরতে বেরোলো, এবার অদৃজা নিজের ইচ্ছাতেই গেল। তিথিও এটাই চাইছিল, ও সুযোগ বুঝে ওদের দুজনকে সামনাসামনি আনবে। নীলাভর কাছ থেকে খবর জোগাড় করেছে রণ সিঙ্গেল। যদিও নীলাভ একটু বুঝতে ভুল করেছিল তিথির question এ কিন্তু তিথি ঠিক করে নিয়েছে দুজনে যখন সিঙ্গেল তখন ডাল মে কুচ কালা হে হি। সবাই একসাথে ঘুরছে, কনক, দূর্বা, নীলাভ ওদের গ্রামের কথা বলছে বাকিদের, তিথিও বলছে কিছু কিছু। কিছুদুর যাওয়ার পর তিথি এরকম বাহানা করে কনক-দুর্গা কে পাঠিয়ে দিল ওর এক বান্ধবীর বাড়ি, কি কি বলতে হবে তাও বলে দিল। তিথির ছোট বেলার খেলার সাথী ছিল সে, মামাবাড়ি এলেই ওর সাথে খেলা করত। ওর মামাবাড়ি থেকে বেশি দূরে বাড়ি নয়, এবার এসে আর দেখা করা হয়নি। কনক-দুর্গা চলে যাবার পর তিথি নীলাভকে উদ্দেশ্য করে বলল- তিথি: নীলাভ কি রে, মেজো মাসি যে ফর্দ দিয়েছে এনেছিস? নীলাভ: হ্যাঁ, কেন? তিথি: তাহলে চল আমরা বাজার টা সেরে ফেলি, নীলাভ: হ্যাঁ কিন্তু দুটো বাইক হলে ভালো হতো। এত বাজার হেঁটে করা, তারপর বাড়ি নিয়ে যাওয়া চাপের হবে। তিথি: তোর বন্ধুদের কারোর বাইক একটু সময় ধার নিয়ে নে। নীলাভ: আছে একটা, তিথি: ওইতো, তাহলে তো হয়েই গেল। নীলাভ: আরে আমরা চারজন আর একটা বাইক কি যে বলিস না? তিথি এবার ডাইরেক্ট বলেই দিল... তিথি: আরে আমরা যাই বাজার করে আনি কনক, দুর্গা এলে ওদের নিয়ে গ্রামটা ঘুরে দেখাবে, ততক্ষণ ওরা একটু ওয়েট করুক। ওর প্রস্তাবে সবাই কেমন হতভম্ব হয়ে গেল। অদৃজা এতক্ষণ চুপ করে ছিল এবার বলল.. অদৃজা: খুব বেশিদূর এগোয়নি আমরা আমি এখান থেকে ফিরে যেতে পারবো, তোরা যা আমি বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। তিথি: অদৃ তা বললে হয় নাকি?সবাই একসাথে বেরিয়েছি, একসাথেই ফিরব। আসলে এখানে বাজার টা একটু দূরে হেঁটে গিয়ে আবার ফিরে আসতে অনেক দেরি হবে। রণ: তাহলে চলো আমি তোমায় নিয়ে যাচ্ছি নীল বরং (অদৃজা কে দেখিয়ে) ওকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাক। তিথি: আসলে পাঁচ বছর পর এলাম তো রাস্তা গুলিয়ে যাবে। ইচ্ছা না থাকা সত্বেও তিথির প্রস্তাব সবাইকে মেনে নিতে হলো। রণ একটা গাছের তলায় গিয়ে বসল, অদৃজা একটু দূরে দাঁড়িয়ে রইল, আর ভাবতে লাগলো (কনক আর দূর্বা কখন যে আসবে)। রণ: বলছি এখানে এসে বসলে কি খুব প্রবলেম হবে? আমি না হয় উঠে যাচ্ছি। অদৃজা চুপ। রণ: সকালে তো চলে যেতেই চাইলাম, কি করব এরা কেউ শুনছে না। অদৃজা তাও চুপ করে রইল। রণ: (আবার বলল) তুমি চাইলে আমি চলে যেতে পারি, আমার জন্য তোমার অসুবিধা হচ্ছে। অদৃজা (এবার আর চুপ করে থাকতে পারল না) তার দরকার নেই, আমার অসুবিধা হচ্ছে না। আবার সব চুপচাপ। রণ: কেমন আছো তুমি? অদৃজা: ভালো। এরমধ্যে কনক আর দূর্বা চলে এলো। ওরা গ্রামের মেঠো পথে হাঁটতে শুরু করলো। রণ মাঝে মাঝে অদৃজার দিকে তাকাচ্ছে, কিন্তু অদৃজা নিজের মনে হাঁটছে, কনক আর দুর্বার সাথে কথা বলছে। অদৃজা কে স্বাভাবিক দেখে রণ কিছুটা স্বস্তি পেল। আজ বিকেল বেলা যখন আবার সবাই আড্ডা দিতে বসল, অদৃজা ছিল সেখানে। সবাই মিলে খুব মজা করলো। অদৃজা কে হাসতে দেখে রণর খুব আনন্দ হল। কাল থেকে ওর নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হচ্ছিল। রৌণকের আদি বাড়ি ও জলপাইগুড়ি। বলতে গেলে ছোট থেকে একসাথে বড় হয়েছে দুজনে, ক্লাস ১০, ১২ একসাথে পাশ করে। দুজন দুজনের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। অদৃজা Arc এর স্টুডেন্ট, আর রণ ছিল Science এর। যাদবপুরে রণ কেমিস্ট্রি আর অদৃজা ইংরাজি নিয়ে ভর্তি হল। রাতে শুতে যাওয়ার আগে ঝুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিল রণ, অদৃজা সিরি দিয়ে উঠে বাঁদিকে যাচ্ছিল ওদের ঘরের দিকে, আবার দুজন মুখোমুখি। চোখে চোখ পরে গেল দুজনের। রণ সিগারেট টা হাত থেকে ফেলে দিল। অদৃজা কিছু না বলে মাথা নিচু করে চলে গেল। ষষ্ঠী তে প্রোপোজ করার পর অদৃজা হ্যাঁ বলে দেয়। পুজোতে ওদের প্রেম টা জমে উঠেছিল। কিন্তু কে জানতো এভাবে সব কিছু শেষ হয়ে যাবে? তিথি: কেমন বুদ্ধি করে তোদের দেখা করালাম বল!! অদৃজা: তুই পাগল? সবকিছু শেষ হয়ে গেছে, It's Over.... কেন করছিস, এগুলো? তিথি: কে বলল সব শেষ হয়ে গেছে? যদি সত্যি তাই হত, তাহলে তুই আর রণদা দুজনেই এখনও Single কেন? তোদের Break up তো 3 বছর আগে হয়ে গেছে। অদৃজা: রণ... Single? (হেসে ফেলল অদৃজা) সকাল বেলা তিথি র মা ওদের ঘরে এল। হাতে একটা প্যাকেট। সেটা অদৃজার হাতে দিয়ে বলল-- “ আজ তো অষ্টমী, আজকে এটা পড়বি তুই। তোরা তৈরি হয়ে আয়, আমি নীচে যায়, অনেক কাজ আছে। অদৃজা: আচ্ছা কাকিমা। তিথির মা চলে যাওয়ার পর তিথি বলল- তিথি: খুলে দেখ কী আছে ওই প্যাকেটে। অদৃজা প্যাকেট খুলে দেখল একটা শাড়ি, চওড়া লাল পাড়, আর সাদা সুতোর কাজ করা। তিথি: (খুব Excited হয়ে বলল) কীরে পছন্দ তো?? অদৃজা: হ্যাঁ, খুব সুন্দর। অদৃজা মনে মনে ভাবল, তার সাথে এরকম কেন হচ্ছে, বার বার অতীত তার সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে। 2nd year exam এর মাস খানেক আগের ঘটনা, অদৃজা বুঝতে পারছে, রণ কেমন যেন পালটে গেছে। কিছুদিন আগেও অদৃজা কে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, একসাথে রেস্টুরেন্টে ডিনার, মুভি... অদৃজার এসব খুব একটা পছন্দ হত না, কিন্তু ও রণ কে না বলতে পারত না। খুব সাধারণ মেয়ে অদৃজা, ও ভালোবাসে সকাল বেলা শিশির ভেজা ঘাসের উপর হাঁটতে। নিস্তব্ধ লাইব্রেরি তে সময় কাটাতে, আর পড়ন্ত সূর্যের লাল আভা যখন গঙ্গার জলে এসে পরবে তার সৌন্দর্য প্রাণ ভরে উপভোগ করতে... রণর হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজতে চাই সে, একসাথে রবিঠাকুর কে চিনতে চাই। এগুলো অবশ্য রণর কাছে খুব বোরিং। বেশির ভাগ দিন কলেজ থেকে একসাথে বেরোত দুজনে, এক্সট্রা ক্লাস না থাকলে। কিন্তু আজকাল রণ প্রায়ই এক্সট্রা ক্লাসের নাম করে কলেজ থেকে লেট করে বেরোত। অদৃজা কে একাই ফিরতে হত। রণ আজকাল আর সেভাবে ফোন করত না অদৃজা কে। একদিন কলেজে গিয়ে রণ কে খুঁজে না পেয়ে ওকে ফোন করল অদৃজা, Not reachable পেয়ে ও একটু টেনশনে পরে গেল। ও রণর বন্ধু দের কাছে খোঁজ নিয়েও সেরকম কিছু জানতে পারল না। ক্লাসে মন বসল না, রুমে গিয়ে রণ কে ফোন করল আবার, বেশ কয়েক বার ফোন করার পরে রণ ফোন রিসিভ করল। অদৃজা: রণ! কোথায় আছো তুমি? আমার খুব টেনশন হচ্ছিল। কলেজে তোমায় খুঁজে না পেয়ে, তোমার বন্ধু দের কাছে খোঁজ করলাম, ওরাও কিছু বলতে পারল না। ফোন টাও..... অদৃজা কে থামিয়ে রণ বলল- রণ: উফ্! তোমার সব কিছু তে এত quarry কিসের? তুমি এমন ভাবে বলছো যেন আমার বিয়ে করা বৌ। আর কি বললে? টেনশন? Come on অদৃ, আমরা আর ছোট নেয়, so.... pls... অদৃজা আর কিছু বলতে পারল না, চুপ করে রইল। রণ: শোনো, আমার একটা Important কাজ ছিল, আর তোমার tension হচ্ছে বলে, অযথা আমাকে ফোন করে Disturb করবে না। ফোন কেটে দিল রণ। অদৃজা এবার কেঁদে ফেলল, রণ এভাবে কোনোদিন এভাবে কথা বলেনি ওর সাথে। তাহলে রণ কি কোন কারণে রাগ করে আছে? পরে মাথা ঠাণ্ডা হলে ফোন করবে হয়ত। অদৃজা, রণ দুজনের বাড়িতেই ওদের বন্ধুত্বের কথা জানত। ওরা একই কলেজে পড়ে, সুবিধা, অসুবিধা হলে দুজন দুজনকে সাহায্য করতে পারবে এটা ভেবে অদৃজার মা, বাবা একটু নিশ্চিত হত। কিন্তু রণ যে অদৃজা কে এড়িয়ে চলছে সে কথা ও বাড়িতে জানাতে পারল না, ওরা চিন্তা করবে। অদৃজার সেরকম কোনও বন্ধু, বান্ধবী ও ছিল না। কলেজের, ওর রুমের বাকি মেয়েদের থেকে ও যে আলাদা, unsmart, ওদের মতো Modern নয়। রণর Classmate মিলি ছিল অদৃজার একমাত্র ভালো বান্ধবী, অদৃজা ওকে সব কথা খুলে বলল। মিলি: (প্রথমেই অদৃজা কে বলল) দেখ অদৃজা তোকে শক্ত হতে হবে। অদৃজা: মানে? তুই এরকম কেন বলছিস? মিলি: আমাদের Classmate তনুজা কে চিনিস তো? অদৃজা: ওই তো, খুব সুন্দর দেখতে, খুব মর্ডান, নিজের গাড়ি নিয়ে কলেজে আসে, তাই তো? মিলি: হ্যাঁ, হ্যাঁ ওর কথায় বলছি। গত ৩ মাস ধরে দেখছি, ও আর রণর মধ্যে একটা relation তৈরি হয়েছে, প্রায়ই ওরা, ক্লাস না করে ঘুরতে যায়। অদৃজা: রণ খুব মিশুকে, ওর মতো ছেলেই হয় না। মিলি: ওরে তোর মাথায় কি একটু ও বুদ্ধি নেই? ওরা দুজনে প্রেম করছে, রণ চিট করছে তোকে। অদৃজার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরল। অদৃজা: (বির বির করতে করতে) না! রণ আমাকে চিট করতে পারে না, পারে না,... রণ... আমাকে চিট করতে... মিলি: কি বলছিস বির বির করে? অদৃজা: হ্যাঁ! মিলি: তুই এসব কি বলছিস? চোখ ছলছল করছে অদৃজার। তিথি: তুই এখনও রেডি হোসনি কেন? অষ্টমীর পূজা শুরু হয়ে গেছে... অদৃজা: এই তো এখনই হচ্ছি। খুব অল্প সাজে, অদৃজা কে খুব সুন্দর দেখতে লাগছে। চওড়া লাল পাড় শাড়ি, লাল ব্লাউজ, কানে একটা দুল, কপালে ছোট একটা টিপ আর খোলা চুল।। চন্দ্রিমা: (অদৃজা কে তিথির দিদার সামনে নিয়ে গিয়ে) ঠাম্মা! দেখো দেখো... দিদা: ভারী মিষ্টি লাগছে, কারো নজর না লেগে যায়। সবাই তো কদিনে অদৃজাকে ওই বাড়ির মেয়ের মতো আপন করে নিয়েছে। রণ ও ছিল সবার মাঝে, অদৃজা কে দেখে চোখ ফেরাতে পারছিল না। কি মিষ্টি দেখাচ্ছে, ও এক দৃষ্টি তে চেয়ে রইল। “ওঁ সর্বমঙ্গল্ল মঙ্গল্লে, শিবে সর্বাধ্য সাধিকে, শরন্ন্যে স্ত্রমবকে গৌরি নারায়ণী নমহঃস্তুতে।” অষ্টমীর অঞ্জলি সম্পন্ন হল, কিছুক্ষণ পর সন্ধিপুজা হবে। রণর খুব ইচ্ছে করছিল, অদৃজার সাথে একবার কথা বলতে, কিন্তু বাড়ি ভর্তি লোক। তিথি, অদৃজা, কনক, সবাই ছিল সেখানে, সন্ধিপুজার আয়োজন চলছে.... নীল ও আছে। রণ: ( ঠিক কি বলবে বুঝতে পারল না, কিন্তু গিয়ে একটু আমতা, আমতা করেই বলল) ইয়ে... মানে... বলছি... তিথি: হ্যাঁ, হ্যাঁ বলো... কিছু লাগবে? রণ: না... বলছি.... সন্ধিপুজা, কখন শুরু হবে? তিথির মা: এই তো, আর কিছুক্ষণ পরেই। কথা বলতে বলতে আড় চোখে অদৃজা কে দেখছিল রণ। এবার অদৃজার কেমন অস্বস্তি হচ্ছিল। আজ যেন নতুন করে ও প্রেমে পড়েছে ও অদৃজার। পুজোর জোগার করতে করতে বড়মামি বলল-“যঞ্জের কাঠ আনা হয়নি, মায়ের ঘরে রাখা আছে। তিথি! কাওকে সাথে নিয়ে, নিয়ে আয় তো, ভারী আছে।” অদৃজা: ( নিজেই বলল) আমি নিয়ে আসব মামি? মামি: হ্যাঁ, যা, ঘরে আলমারির পাশে রাখা আছে, একা আনতে পারবি না। অদৃজা: আমি পারব, নিয়ে আসছি। অদৃজা ঠাকুর দালান থেকে বেড়িয়ে... দিদার ঘরের দিকে গেল। রণ একটু এদিক ওদিক দেখে নিয়ে, অদৃজার পিছনে গেল। অদৃজা দিদার ঘর থেকে একটা ব্যাগ নিয়ে বেরোল, অদৃজার একটু অসুবিধা হচ্ছিল, বেশ ভারী। রণ এগিয়ে এসে ব্যাগ টা নিয়ে বলল- “আমি নিয়ে যাচ্ছি।” দুজন আবার ঠাকুর দালানের দিকে যাচ্ছিল, রণ দাঁড়িয়ে পরল- রণ: অদৃজা! একটু দাঁড়াবে? ভারী ব্যাগ টা নিতে রণর হয়ত অসুবিধা হচ্ছে ভেবে অদৃজা দাঁড়িয়ে পরল। রণর কাজ করার যে অভ্যেস নেই, সেটা অদৃজার থেকে ভালো আর কে জানে? অদৃজা: ব্যাগ আমি নিচ্ছি, ( রণর হাত থেকে ব্যাগ টা নিতে গেল) রণ: (ব্যাগ দিল না, অদৃজার হাত ধরে বলল) তোকে খুব সুন্দর লাগছে রে। অদৃজা: হাত ছাড়ো, ঠাকুর দালানে সবাই অপেক্ষা করছে আমার জন্য। দেখতে দেখতে সন্ধিপুজা ও সমাপ্ত হল। সবাই মিলে জমিয়ে আড্ডা, নাচ, গান, চললো সারা সন্ধ্যা ধরে। রাতে, সবাই ঘুমিয়ে পরেছে, অদৃজা একা দাঁড়িয়ে আছে ঝুল বারান্দায়, রণর চোখেও ঘুম নেই। অদৃজার পাশে এসে দাঁড়াল। রণ: মিলি তোমায় মিথ্যে কথা বলেছিল সেদিন। অদৃজা: আমি তোমায় বিশ্বাস করি না। রণ: হুম, (একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল) রণ: কিন্তু আমি তোকে আজ সব বলতে চাই। রণ বলতে শুরু করল- বাবার শরীর তখন খুব একটা ভালো যাচ্ছিল না, ঠিকমত কাজ করতেও পারত না। আমি দেখলাম, আমার খরচ যদি আমি চালাতে পারি, তাহলে একটু সুবিধা হবে। কিন্তু কী করে করব? কে কাজ দেবে আমায়? কাজ খুঁজে বেরাচ্ছিলাম পার্টটাইম কিছু, কিন্তু পাচ্ছিলাম না। তনুজা খুব ভালো মেয়ে, আমার খুব ভালো বন্ধু, শুধু বন্ধু। ও আমার সমস্যার কথা শুনে, ওর বাবাকে বলে একটা পার্টটাইম যবের ব্যবস্থা করে দেয়, শুধু একটা শর্ত দেয়, ওকে পড়াতে হবে, আর এই কথাগুলো আমি কাওকে বলতে পারব না। তাই তোকে কিছু বলতে পারিনি, আর আমি জানতাম তুই জানতে পারলে আমায় কিছুতেই কাজ করতে দিবি না, আমার পড়ার ক্ষতি হবে এই ভেবে। এতক্ষণ বলে রণ থামলো। সব চুপচাপ... অদৃজা: কাকু কেমন আছেন এখন? রণ: নেই... তুই আমায় ছেড়ে যাওয়ার পর, বাবাও....... অনেক রাত হয়েছে, গুড নাইট। রণ ঘরে চলে গেল। অদৃজা চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল... সারারাত ঘুমাতে পারেনি অদৃজা, রণর বলা কথা গুলো ভেবেছে আর, নিজের অজান্তে শুধু কেঁদেছে। এতটা ভুল বুঝল ও রণ কে, শুধু একজনের কথায়? আরও নানা প্রশ্ন ওর মন কে নাড়া দিতে থাকে। ভিতর ভিতর খুব ছটফট করতে থাকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে, তিথি অদৃজা কে ঘরে খুঁজে না পেয়ে ফোন করে, কিন্তু ফোন ঘরেই আছে। তিথি বাইরে বেড়িয়ে দেখে ঝুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে নীলাভ। তিথি: তুই অদৃজা কে দেখেছিস? নীলাভ: কয়? না তো! দেখ হয়তো ঠাকুর দালানে আছে। তিথি ঠাকুর দালানে গিয়ে দেখল, কিন্ত অদৃজা সেখানেও নেই। এবার একটু অবাক হল তিথি। এত সকালে কোথায় গেল অদৃজা? রণ: তোর কী হল? এরকম পাগলামি করছিস কেন? একা একা, কাওকে না বলে, এভাবে কেউ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে? অদৃজা: তুমি আগে আমাকে সবটা কেন জানালে না? রণ: তুই তো নিজেই বলেছিলি, আমি যেন তোর সামনে আর কখনও না আসি। অদৃজা: ওটা তো রাগের মাথায় বলেছিলাম, সেটাও বোঝোনি? রণ: বুঝেছি, ভেবেছিলাম তোকে ফোন করে বুঝিয়ে বলব সব কিছু। তুই তো ফোন নাম্বার ও চেঞ্জ করে ফেলেছিলি। এত অভিমান আমার উপর? অদৃজা চুপ করে রইল। রণ: তুই আমাকে এত দিনেও চিনতে পারলি না। অদৃজা: আমি তো শহরের মেয়েদের মতো স্মার্ট নয়, ওদের মতো পোশাক পড়ি না, ক্লাবে যায়না, পার্টি করি না, এগুলো তো তোমার ভালোলাগে। অদৃজা কেঁদে ফেলল। রণ: আবার কাঁদছিস? দেখ এবার আমি কিন্তু চলে যাব এখান থেকে। অদৃজা: না, রণ প্লিজ... প্লিজ.... রণ: আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে আর কান্নাকাটি নয়। ভুল কিছু টা আমি ও করেছি রে, আসলে বন্ধুদের পাল্লায় পরে, আমি ও! কিন্তু তুই আমার সব কিছু পাগলি। তিথি: তোরা এখানে? অদৃ? কি হয়েছে? কাঁদছিস কেন? রণ দা তুমি অন্তত বলো কী হয়েছে? রণ: তিথি! তুমি হয়ত জানো না, আমরা দুজন দুজনকে... তিথি: জানি, রণ দা। অদৃজা আমাকে বলেছে, সব কিছু। কিন্তু তোমরা এখন চলো, বাড়ির সবাই উঠে পড়ছে, তোমাদের খোঁজ করবে, বিশেষ করে অদৃজার... রণ: হ্যাঁ, চল। কিন্তু তোমার এই বান্ধবীর কান্না থামছে না যে! এবার মনে হয়, বন্যা হয়ে যাবে। অদৃজা: রণ... দাঁড়াও তোমার হচ্ছে... তিথি ও হেসে ফেলল তিথি: আচ্ছা, বাকি কথা পরে হবে... এখন চল... অদৃ আজ নবমী, বাড়িতে সবাই মিলে হইচই... কত আনন্দ... কিন্তু অদৃজার নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে... রণর কাছে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত ও শান্তি পাচ্ছে না। কিন্তু সবার মাঝে ও আলাদা করে রণর সাথে কথা বলবে কী করে? নবমীর পুজোর শেষে সবার একটু মন খারাপ হল, কাল যে দশমী, মায়ের বিসর্জন... বিকেলবেলায় বাড়ির প্রায় সবাই মিলে গোল হয়ে বসল... আড্ডা, গল্প, খেলা... আরও কত কি... রণ খেয়াল করল অদৃজা একটু মনমরা হয়ে আছে। রাতে কিছু না খেয়েই শুতে চলে গেল অদৃজা। সবার খাওয়া হলে রণ তিথি কে বলল- অদৃজার খাবার বেড়ে দিতে। রণ: আমি কী তোমাদের ঘরে একটু যেতে পারি? তিথি: কেন পারবে না? চলো... অদৃজা! দেখ, কে এসেছে! রণর হাতে একটা প্লেটে খাবার সাজানো। অদৃজা বিছানায় শুয়ে ছিল... উঠে বসল। রণ গিয়ে ওর পাশে বসল। তিথি: তোমরা প্রেম কর, আমি পাশের ঘরে যাচ্ছি (মুচকি হেসে তিথি চলে গেল)। রণ: না খেয়ে চলে এলে যে... অদৃজা: খেতে ইচ্ছে করছে না। রণ! আমি খুব বড় ভুল করে ফেলেছি, প্লিজ.... আমায় ক্ষমা করে দাও...প্লিজ... (চোখ ছলছল করছে অদৃজার) রণ: করতে পারি একটা শর্তে... আগে লক্ষী মেয়ের মতো খাবার টা খেয়ে নিতে হবে। নাও... অদৃজা কিছু না বলে খেয়ে নিল। অদৃজা যখনই মন খারাপ করে না খেয়ে থাকত, রণ নিজের হাতে ওকে খাইয়ে দিত, আজও তাই করল। দুজনের মধ্যে দূরত্ব একটু একটু করে মিটতে লাগল.... দশমীর ডাকের আওয়াজ শুনলে.... মন কেমন ভার হয়ে যায়.... আবার একবছরের অপেক্ষা... সকাল থেকে সবাই ব্যস্ত... মাকে বরণ করার প্রস্তুতি চলছে। অদৃজা: এ কদিন খুব আনন্দ হল বল? তিথি: হ্যাঁ, কিন্তু মা আজ চলে যাবেন। অদৃজা: হুম... তিথি: রণ দা কোথায়? দেখছি না তো! অদৃজা: জানিনা! তিথি: তোদের মান- অভিমানের পালা এখনো শেষ হয়নি? অদৃজা: ভুল বুঝে খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি ওকে... দশমীর পূজা শেষ হল... একে একে মাকে বরণ করতে শুরু করলেন বাড়ির মহিলারা, শুধু বাড়ির নয়, গ্রামের মহিলারাও এসেছেন, মা কে বরণ করতে। অন্যদিকে চলছে ধুনুচি নাচ.... বরণ শেষে সবাই মাকে প্রণাম করে, মনের ইচ্ছে জানালো মাকে.... তারপর শুরু হল সিঁদুর খেলা... তিথি, অদৃজা ওরাও সবার সাথে যোগ দিল। এবার এল সেই সময়- মায়ের বিদায়ের পালা... আয়োজনে সবাই ব্যস্ত.... তিথি অদৃজা কে ডেকে নিয়ে গেল... অদৃজা: কোথায় যাচ্ছি আমরা? তিথি: চল না.... তিথি ছাদে নিয়ে গেল অদৃজা কে... রণ সেখানে উপস্থিত ছিল... রণ: Thanks তিথি। তিথি: আমার ট্রিট এর কথা মনে থাকবে তো? রণ: থাকবে, থাকবে... অদৃজা! তোর সাথে কিছু কথা ছিল.... অদৃজা: কি? তিথি: আমি নিচে গেলাম, তোমরা বেশি দেরি করো না। রণ: তুমি এখানে থাকতে পারো, আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। তিথি: আমার নীচে কিছু কাজ আছে, আর সবাই খুঁজবে আমাকে। তিথি চলে গেল। অদৃজা: বলো কী বলবে? রণ: আমাদের মধ্যে যাই ঘটে থাকুক, আমি আজও জানি, তুই আমার Best Friend, আজও তোকে আগের মতোই খুব ভালোবাসি, বা হয়ত তার থেকেও বেশি। জানিনা আবার কবে দেখা হবে? ভালো থাকিস্। আর কখনও কোনো প্রয়োজন হলে বলিস, আমি সব সময় তোর পাশে আছি। অদৃজা: আমি বলেছিলাম, তুমি কখনো আমার সামনে আসবে না, তাই এতো অভিমান? রণ: না রে! আমার জীবন এখন অনেক বদলে গেছে, আর এই অনিশ্চিত জীবনের সাথে তোকে জড়াতে চাই না। অদৃজা: আমি চাই। আমি চাই, তুমি সব সময় আমার সামনে থাকো, ঠিক আগের মতোই। আজও তোমায় খুব ভালবাসি... বলেই অদৃজা জড়িয়ে ধরল রণকে। আবার বলল- আচ্ছা! আমাদের যত রাগ, অভিমান, আমরা আজ মায়ের পায়ে বিসর্জন দিতে পারিনা? রণ এবার অদৃজা কে আরও কাছে টেনে বলল- “পারি”।

আর অপেক্ষা

সামনে সাদা পৃষ্ঠা, হাতে Black Pen- না আমি লেখিকা বা কবি নয়। আমি হলাম খুব সাধারণ মাপের, খুব সাধারণ গোছের একটা মেয়ে। আমি রোজ ডাল-ভাত খাই,বিরিয়ানির মত বিলাসিতা হয় মাঝে-মাঝে। আমি চুড়িদার,শাড়িতে নারী। জিন্স-টপে বা মডার্ন ড্রেসে ক্ষণিক হতে পারি আধুনিকা। আমি অভ্যস্ত বাসে, ট্রামে,রিক্সোতে। Private car এ রাজকীয়তা, সেটাও হয় না বললে ভুল হবে। তবে আমি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। ছোট ছোট রোজকার ভাঙ্গা-গড়া,ওঠা-পড়া দিয়ে সাজাই আমার একান্ত নিজের খেলাঘর যেখানে five star hotel এর ঝা চকচকে ঘর নেই, মখমলের চাদর পাতা নরম বিছানা নেই, দেওয়ালে লাগানো বড় পর্দা যা বোকাবাক্সই বটে, না নেই... আছে কিছু কান্নাভেজা স্মৃতি, অল্প রঙিন স্বপ্ন,অজস্র খোলা চিঠি, আর...... আর অপেক্ষা...

একাকীত্বের মাঝে

আজকাল প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে- কবে? কোথায়? কীভাবে হারিয়েছি? যা ছিল আমার সব থেকে প্রিয়। বলতে ইচ্ছে করে অনেক কিছু... কিন্তু বলা যে বারণ। ইচ্ছে করে সব ভুলে চিত্কার করে নিস্তব্ধতা কে ভেঙেচুরে দিতে... হাসি পায়, ওরে আগে বাঁধন তো খোলা হোক। মন চাই, খুব চাই, বাঁধ ভাঙা নদী হয়ে, একূল-ওকূল সব ভাসিয়ে দিতে... থাম, থাম করিস কী? এখুনি দেবে দু পা ভেঙে। আমি বাপু বেশ আছি- খাই, দাই, আর গান বাধি... কিন্তু সত্যিই কী তাই? তবে কেন রাত জাগিস্? ঝাপসা চোখে কী খুঁজিস? না গো না, আর খুঁজি না! ওসব যে অতীত। হারিয়েছি আমি, আমার আমি কে, তা পাওয়া কী ওতই সোজা? তবে এক বন্ধু পেলুম... একাকিত্বের মাঝে নিঃসঙ্গতা...

ভালো থাকা

অগোছালো ঘর,এলোমেলো বিছানার চাদর,বালিশের ঘুম এখনও ভাঙেনি, বন্ধ জানালায় বসবাসকারী মাকড়সা গুলো জানে ওদের কেউ বিরক্ত করবেনা, বুকশেলফের বই গুলো আজ ক্লান্ত। দামী ফুলদানির ফুলগুলো শুকিয়ে গেছে,অনেকদিন। যে মুহূর্তগুলো কোনো একসময় ক্যামেরাবন্দি হয়েছিল,ফ্রেমের সাথে দেওয়ালে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে,বহুবছর হাত পড়েনি,কেউ আর আজ ওদের দিকে তাকায় না। জানালার বাইরের জগৎ একদম আলাদা রঙ্গমঞ্চের অভিনয় ওখানে চলেনা। হই হুল্লোড় চিৎকার গাড়ির হর্ন,সব যেনো কানের পর্দা ছুঁয়ে কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে। মুঠো ফোন এর আলো জ্বলছে,নিভছে,আর ঘড়ির কাটার তো থামার উপায় নেই,বিরামহীন চলছে। সব কিছুর ভিড়ে একটা জিনিস সযত্নে রাখা আছে “ভালো থাকা"।

The Invisible Man

|| প্রথম পর্ব || অনেকদিন পর সেদিন বিকেলে একটু হাঁটতে বেরিয়ে ছিলাম। পার্কের একটা বেঞ্চের উপর অনেকক্ষণ ধরে একটা ডায়েরি পড়েছিল। ডায়েরিটা খোলা। হাওয়াতে পাতাগুলো উল্টে পাল্টে যাচ্ছিল। আশেপাশে কাউকেই দেখতে পেলাম না। আমি কৌতূহলবশতঃ এগিয়ে গেলাম। কয়েকটা পাতা উল্টিয়ে খুঁজতে লাগলাম কোনো তথ্য বা দরকারি কিছু লেখা আছে কি না... মাঝেমাঝে কিছু লেখা আছে। তার অর্থ যদিও বের করা যাচ্ছে না। প্রায় শেষের দিকে একটা পৃষ্ঠায় নাম ও ঠিকানা লেখা। প্রফেসার অভিষেক চৌধুরী, বাড়ি নং ১২০, রোড নং ১৩/ক, গড়িয়াহাট, কলকাতা। চমকে উঠলাম। তারপর এটা সেটা ভেবে, ডায়েরিটা রেখে, উঠে চলেই যাচ্ছিলাম... এমন সময় মনে হল, একবার এই ঠিকানায় খোঁজ নেওয়া দরকার। বিষয়টা জানতে হবে। ডায়েরিটা নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। আমাকে বারবার একটা জিনিস ভাবাচ্ছে। মানে আমি যেটা ভাবছি সেটা যদি হয়! আমার যাওয়াটা সত্যিই খুব দরকার। ভাবতে ভাবতে কখন চোখ লেগে গেল বুঝতে পারিনি। পরদিন সকালে গেলাম সেখানে। কলিংবেল বাজাতেই একটা বছর পঁচিশের ছেলে দরজা খুলে দিল। - কাকে চান? - প্রফেসার অভিষেক চৌধুরীর সাথে দেখা করতে এসেছি। উনি কি বাড়িতে আছেন? - আপনি ওনাকে চেনেন? - হ্যাঁ। - কে আপনি? - দরজায় দাঁড়িয়েই বলবো নাকি ভিতরে এসে... - আসুন, ভিতরে আসুন। - তোমার নাম? - সুমন। - কেউ নাম জিজ্ঞেস করলে পুরোনাম বলতে হয়। যাইহোক, আমি অভিষেক স্যারের ছাত্র। যাও, স্যারকে ডাকো, আমি অপেক্ষা করছি। - আপনি বসুন, আমি ডাকছি। সুমন চলে গেল। ডায়েরিটা বার করলাম না। আমি বাড়িটা খেয়াল করতে লাগলাম। সবকিছু আগের মতোই টিপটপ, সাজানো গোছানো। কিন্তু তারপরেও মনে হচ্ছে কোন একটা বড় ঘটনা ঘটে গেছে এই বাড়িতে। কাজের মেয়েটা চা দিয়ে গেল। সাথে বিস্কিট আর এক গ্লাস জল। আমি জল খেয়ে, চায়ে চুমুক দিতেই প্রায় বছর চল্লিশের এক সুন্দরী মহিলা এলেন। সাদা রঙের শাড়ি, চোখে চশমা। চুলটা কোনোরকমে আলগোছে বাঁধা। চায়ের কাপ নামিয়ে রাখলাম। - আপনি মিসেস চৌধুরী? - হ্যাঁ। আপনি কি আমাকে চেনেন? - না। - তাহলে আমার স্বামী কি আপনাকে চিনতেন? - চিনতেন মানে? তিনি কোথায়? আমি ওনার সাথেই দেখা করতে এসেছি। - আসলে পরশু রাতেই উনি মারা গেছেন। - ওহ মাই গড! কি করে ! - বলছি, কিন্তু তার আগে আপনার পরিচয়টা জানতে পারি? আপনাকে কেমন চেনা চেনা লাগছে। কোথায় যেন দেখেছি... - আমি মিহির বিশ্বাস। পেশায় একজন সাংবাদিক। আমি চৌধুরী স্যারের ছাত্র। কলেজ জীবনের। - হ্যাঁ, ঠিক। মনে পরেছে, আপনার ইনটারভিউ দেখেছি অনেক। আর্টিকল ও পড়ি মাঝে মধ্যে। - যদি কিছু মনে না করেন তাহলে একটা কথা বলি? - নিশ্চয়, বলুন। - আচ্ছা, চৌধুরী স্যার কিভাবে মারা গেলেন? একটু থেমে উনি বললেন, - প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে হার্ট এটাক। কিন্তু আমার ধারণা ওনাকে খুন করা হয়েছে। - কে খুন করেছে? - এটা বলতে পারছি না। তবে আমার সুমনকে সন্দেহ হয়। - ওকে দেখে তো তেমনটা মনে হল না ও খুন করতে পারে। - মিহির বাবু আপনি কি এটা জানেন, এসব ব্যাপারে যাকে সবচেয়ে কম সন্দেহ করা হয়, শেষে দেখা যায় সেই আসল অপরাধী। - বাহ্ আপনি তো যথেষ্ট বুদ্ধিমতী। অবশ্য এদিক থেকে দেখলে তো আপনিই দোষী তা প্রমাণিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মিসেস চৌধুরী হাসলেন। বেশ শব্দ করেই হাসলেন। - আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে স্যারের মৃত্যুটা যতটা বেদনাদায়ক, তারচেয়ে বেশি রহস্যময়। - বেশ তো, রহস্য ফাঁস করতে চাইলে, করতেই পারেন। ভালোই তো। - আপনি যদি আমাকে বিশ্বাস করে এই রহস্য উদ্ঘাটনের কাজটা দেন, অবশ্যই চেষ্টা করবো আমি। এই সুযোগে মগজে একটু ধার দিয়ে নেওয়া যাবে। - বেশ, তাই হোক। আপনি চাইলে এখানে থেকেই কাজটা করতে পারেন। গেস্টরুমে থাকবেন। যাবতীয় বিষয়ে বাড়ির সবাই আপনাকে সাহায্য করবে। আমি সুমন আর রুমাকে ডেকে বলে দিচ্ছি। ওরা আপনাকে সব দেখিয়ে দেবে। মিসেস চৌধুরী সুমন আর রুমাকে ডাকলেন। ডেকে বললেন, শোনো, মিহির বাবু এখানে কিছুদিনের জন্য থাকবেন। উনি তোমাদের স্যারের ছাত্র, খুনের রহস্য বের করবেন। সুমন খুবই অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলল, কাকা খুন হয়েছেন? - সঠিক ভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে মিসেস চৌধুরী সেরকমটাই ধারনা করছেন। আচ্ছা, আপনি কি পুলিশকে আপনার ধারনার কথা জানিয়েছেন মিসেস চৌধুরী? - না। পুলিশ তাদের মত করে কাজ করুক। আর আপনি আপনার মতো। - তাও ঠিক। আমি আজ রাতেই চলে আসব। - রাত এগারোটার আগেই আসবেন। এগারোটার পর আমাদের বাড়ির গেট বন্ধ হয়ে যায়। মনটা বেশ ভারাক্রান্ত। কলেজ জীবনের পুরনো কিছু স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠল। মৃত্যুসংবাদ কখনো কাউকে সুখ দান করে না, একমাত্র খুনি ছাড়া। হালকা একটা টেনশন হচ্ছে। যদিও টেনশন করার কিছু নেই। কিন্তু অদ্ভুত লাগার মতো একটা বিষয় খেয়াল করলাম। মিসেস চৌধুরীর চোখে মুখে হতাশা বা শোকাহতের বিশেষ কোনো চিহ্ন নেই। একটু খটকা লাগলো। আর সেই কারণেই ওনাদের বাড়িতে থাকতে রাজিও হয়ে গেলাম, সবটা ভালোভাবে যাচাই করবো বলে। ডায়েরিটার কথা ইচ্ছা করেই আর বললাম না। আমি "চৌধুরী ভবন" থেকে বেরিয়ে সামনের একটা দোকান থেকে সিগারেট নিলাম। মনের ভারের সাথে সাথে টেনশন কমাতে নিকোটিন বেশ কার্যকরী। বাড়ি এসে একটা ব্যাগে কিছু প্রয়োজনীয় জামাকাপড় ও বইপত্র নিলাম। অফিসেও দু'দিনের ছুটি চেয়ে নিলাম। একটু কসরত করতে হলো বটে... দশটার মধ্যে পৌঁছে গেলাম "চৌধুরী ভবন"। কাজের মেয়ে রুমা আমাকে থাকার জন্য গেস্টরুমে নিয়ে গেল। - স্যার, আপনি কি এখানে খাবেন নাকি ম্যাডামের সাথে ডাইনিংরুমে গিয়ে খাবেন? - তার আর দরকার নেই। আমি খেয়েই এসেছি। - ঠিক আছে আমি তাহলে আসি... - দাঁড়াও, তোমার সাথে একটু কথা বলি। রুমা কেমন যেন ভয় পেল। আমি সিগারেট ধরালাম। - আচ্ছা তুমি এই বাড়িতে কতদিন ধরে কাজ করছো? - তা প্রায় তিন বছর। - তোমার স্যার যেদিন মারা যান, তুমি কোথায় ছিলে? - বাড়িতেই ছিলাম। - এই বাড়িতেই তো খুন হয়েছে, নাকি? - হ্যাঁ স্যার। - তুমি কিভাবে জানলে খুন হয়েছে? সবাই তো বলছে যে উনি মারা গেছেন, হুম? - না স্যার। মানে ইয়ে... - খুন টা তুমি করোনি তো? - না না স্যার, কি বলছেন? আমি এসব করিনি। ভগবানের নাম করে বলছি। - আচ্ছাআচ্ছা, বুঝেছি। এবার বলো তো, সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল, সব খুলে বল। - স্যার, আমি সারাদিন কাজকর্ম করি। তাই রাতে সবার খাওয়াদাওয়া শেষ হলে, কাজ সেরে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি। ওইদিন সাহেব ওনার পড়ার ঘরে ছিলেন। সকালে মেঝেতে স্যারের মৃতদেহ পাওয়া যায়। - রাতে কোনওরকম শব্দ পাওনি? - না স্যার, আমি ঘুমোলে মরার মত ঘুমোই। - তোমার স্যারের মৃতদেহটা প্রথম কে দেখেছিল? - স্যারের পড়ার ঘরে আমাদের কারও ঢোকার অনুমতি নেই। আমরা কেউ যাই না। ম্যাডামই যেতেন। আর খুব দরকার হলে সুমন দাদা যায়। কিন্তু সেদিন ম্যাডামই গেছিলেন। উনিই প্রথম দেখেছিলেন। রুমাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। তাকে বিদায় দিলাম। সিগারেটটা শেষ করে শুলাম। পুরো ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছিলাম। ঘুম আসতে দেরী হচ্ছিল। বারান্দায় এলাম হাওয়া খেতে। রাত হয়ে আসছে বেশ। তেমন লোকজন নেই। গেটের বাইরে শুধু কয়েকটা ছেলেকে হেঁটে যেতে দেখলাম..... || দ্বিতীয় পর্ব || পরদিন সকালে খাবার টেবিলে এলাম। মিসেস চৌধুরী, সুমন, রুমা সবাই আছে। আমি খেতে খেতে মিসেস চৌধুরীকে বললাম, - আপনার কি কোনো ব্যস্ততা আছে? - না, কেন বলুন তো? - ব্রেকফাস্ট শেষে আপনার সাথে কিছু কথা আছে। - বেশ। খাওয়া শেষ করে আমি বারান্দায় এসে বসলাম। সিগারেট ধরাতে যাবো তখনই মিসেস চৌধুরী এলেন। সিগারেট টা না জ্বালিয়েই রেখে দিলাম। মিসেস চৌধুরী আমার সামনের চেয়ারটাই বসে বললেন, - বলুন কী জানতে চান? - সকালে চা খেয়েছেন? - আমি চা খাই না। - কেন? - চা খেলে স্কিন কালো হয়ে যায়। - ওহ্। - হঠাৎ চায়ের প্রসঙ্গ? - আসলে চা টা খুব ভালো হয়েছিল, তাই। - তাহলে আরেক কাপ দিতে বলি? - না। থাক। দ্বিতীয় কোনো কিছুই প্রথমের মতো ভালো হয় না। মিসেস চৌধুরী তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। তিনি ধারনা করলেন, আমি তাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলছি। তিনি যদি এটা ধারনা করে থাকেন, তাহলে ওনার ধারনা সঠিক। মিসেস চৌধুরী অভিষেক স্যারের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী'র সাথে আমাদের আলাপ ছিল। ওনারা নিঃসন্তান ছিলেন। পরবর্তীতে শুনেছিলাম, স্যারের পত্নীবিয়োগের কথা। উনি আবার বিয়ে করেছেন তাও শুনেছিলাম। কিন্তু আলাপ করার সুযোগ হয়নি। আর সুযোগ টা যে এভাবে হবে তা আশা করিনি। আমি বললাম, - আপনাদের সন্তান নেই? - না। - কেন নেই- এই প্রশ্নটা অমূলক। তবে আমার ধারণা আপনাদের মধ্যে বয়সের যথেষ্ট পার্থক্য ছিল। স্যারের বয়স হয়েছিল সত্তর। আর আপনার চল্লিশের আশেপাশে। ঠিক বললাম? - হ্যাঁ। - চৌধুরী স্যারের প্রথম স্ত্রী কিভাবে মারা যান? - ক্যান্সারে মারা যান। - আচ্ছা, স্যারের মৃত্যুর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট কি আপনি দেখেছেন? - না। পুলিশ এখনো দেয়নি। - আচ্ছা, এটা বলুন, যে রাতে স্যার খুন হন তখন আপনি কোথায় ছিলেন? - আমি আমার ঘরে ছিলাম। ঘুমোচ্ছিলাম। - আপনি সাধারণত কখন ঘুমোন? - বারোটার আগেই ঘুমিয়ে যাই। - তাহলে গতরাতে এক'টার দিকে বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করেছিলেন কেন? মিসেস চৌধুরী ঢোঁক গিলে আমার দিকে তাকালেন। আমি একটু থেমে আবার বললাম, - আপনি নিয়মিত রাত জাগেন। আপনার চোখমুখ সে কথা বলে দিচ্ছে। আপনি মিথ্যে বলছেন কেন? - এমনিই। দেখলাম, আপনি বুঝতে পারেন কি না। একটু হেসে বললাম, - যাইহোক, সেই রাতের ঘটনা বলুন। ঠিক কি কি হয়েছিল? - উনি রাতে আমার সাথে খুব কমই থাকতেন। প্রায়ই লাইব্রেরিতে থাকতেন। মাঝেমধ্যে রাতে লাইব্রেরিতেই ঘুমোতেন। আমি আমার ঘরে ছিলাম। টিভি দেখছিলাম। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে ছিলাম। কখন ঘুমিয়ে যাই বুঝতে পারিনি। সকালে উঠে লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখি ওনার ডেডবডি পড়ে আছে। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। ওনারা এসে লাশ নিয়ে যান ময়নাতদন্তের জন্য। - আচ্ছা, ওনার বিষয় সম্পত্তির উত্তরাধিকারী কে কে? উনি কি কোনো উইল করে গেছেন? - এটা আমি সঠিকভাবে বলতে পারবো না। তবে মনে হয় উনি কোনো উইল করেন নি। - আপনি সুমনকে সন্দেহ করছেন যে ও খুন করেছে। কিন্তু, আমি যতদূর জানি, আইন অনুযায়ী সমস্ত সম্পত্তির মালিক হবে সুমন। তাহলে সুমন কেন খুন করবে ওর কাকাকে? আর কিভাবে খুন করা হয়েছে বলে আপনার ধারণা? - সেটা তো বলতে পারবো না। সম্পূর্ণ টা আমার ধারণা। - শুধু ধারণার ওপর নির্ভর করে কিছু বলা যায় না মিসেস চৌধুরী। যাইহোক, আপনি রেস্ট নিন। অনেক সময় নষ্ট করলাম আপনার। - কোন দরকার হলে ডাকবেন। মিসেস চৌধুরী চলে গেলেন। আমি থানায় খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করলাম রিপোর্ট জানার জন্য। প্রথমে ফোন করে ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট জানতে চাইলে আমাকে কোনকিছু জানানো হলো না। আমি আমার বন্ধু এসপি তারককে ফোন করলাম। তারপর রিপোর্ট শুনে আকাশ থেকে পড়ার মত অবস্থা। এটা কী করে সম্ভব??? || অন্তিম পর্ব || কিছুক্ষণ পরে সুমনকে ডেকে পাঠালাম। - সুমন, এটা বল, তুমি এই বাড়িতে কতদিন ধরে আছো? তোমাকে আমার ছাত্রাবস্থায় তো দেখিনি... - তা প্রায় দশবছর। - তোমার বাবা মা কোথায়? - বাবা মা মারা গেছেন। তারপর থেকে আমি কাকার কাছেই থাকি। - সেই রাতে তুমি কোথায় ছিলে? - আমার ঘরে ছিলাম। - আমার ধারণা তুমি মিথ্যে বলছ। কারণ আমি "চৌধুরী ভবন" আসার পর গত রাতে বারোটার দিকে তোমাকে বাইরে দেখেছি। ওটা তুমিই ছিলে, আমি ভুল করছি না, কি তাই তো? সুমন ভ্যাবাচ্যাকা খেল। - না মানে, ইয়ে...... - আমতা আমতা করছো কেন? তুমি তো একজন ভালো ছাত্র ছিলে। কেমিস্ট্রিতে মাস্টার্স করেছো। চাকরি না করে এখানে পড়ে আছো কেন? - আসলে কাকা একা ছিলেন। ওনার দেখাশোনা আমিই করি। ওনার নিজের বলতে আর কেউ নেই, ওনার সবকিছুই পরবর্তীতে আমার, তাই চাকরিবাকরি করার কথা মনে হয়নি। - বাহ্। কাকার ভরসায় সারাজীবন! যাইহোক, তোমাকে আমি বাইরে দেখলাম কিভাবে শুনবে? আমি দোতলার বারান্দা থেকে কাল রাতে দেখলাম কয়েকটা ছেলে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় আমার চিনতে কষ্ট হয়নি, যে সেই দলে তুমিও ছিলে। - আসলে স্যার, আমি রাতে লুকিয়ে আমার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে যাই। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়াটা কাকা-কাকিমা পছন্দ করেন না, তাই... - নিশ্চয় মেইনগেট দিয়ে বের হও না? - না, বাড়ির পিছনে একটা ছোটো গেট আছে। ওটার চাবি আমার কাছে। - তোমাকে এই বাড়িতে দেখার আগে কোথায় যেন দেখেছি। কোথায় দেখেছি বলোতো? মনে করতে পারছি না। - আপনি আমাকে এখানেই প্রথম দেখেছেন। - না, ভুল বললে। এখানে এসে প্রথম কথা হয়েছে। আগে কোথায় যেন দেখেছি, কোথায়... হ্যাঁ মনে পড়েছে, তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম পার্কে। আমার ধারণা তুমিই পার্কে ডায়েরিটা ফেলে রেখেছিলে আমার জন্য, যাতে আমি স্যারের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে পারি। ঠিক? অনেকক্ষণ চুপ থেকে সুমন বলল, - হ্যাঁ। আমি আপনাকে আগে থেকেই চিনি। আপনার সাংবাদিকতা জগতে যথেষ্ট নাম ডাক আছে তা আমি জানি। আর এও জানি, আপনি কাকার একজন প্রিয় ছাত্র। বাকিদের থেকে আপনাকে কাকা বেশিই ভালোবাসতেন, স্নেহ করতেন। আপনি যে খুব বুদ্ধিমান তাও আমার জানা। অনেকের অনেক সমস্যার সমাধান করেছেন আপনি। কদিন ধরেই কাকা অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন। তাই আপনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিলাম, যদি কিছু সাহায্য করতে পারেন... এর মধ্যেই এই ঘটনা ঘটে গেল। আমি আপনাকে ফলো করতে করতে পার্কে যাই, আর সুযোগ বুঝে ডায়েরিটা রেখে দিই, যাতে আপনার চোখে পড়ে। আমার মনে হচ্ছে কাকা খুন হয়েছেন। আর এর সমাধান একমাত্র আপনিই করতে পারবেন। - তোমার কাকিমার ধারণা তুমিই খুন করেছো। - আমি কেন খুন করবো বলুন? কাকার সমস্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকারী এমনিতেই তো আমি। তাহলে আমি শুধু শুধু কেন খুন করবো? - তা ঠিক। আচ্ছা, আমি একবার লাইব্রেরিটা দেখতে চাই। দেখানো যাবে? - হ্যাঁ, চলুন। আমি ডায়েরিটা নিয়ে লাইব্রেরিতে গেলাম। আমার মনে হচ্ছে আমি সমাধানের দ্বারে পৌঁছে গেছি। আগের চেয়েও বেশি সুন্দর ও গোছানো স্যারের লাইব্রেরিটা। ওনার ইজিচেয়ারের পাশে একটা সিঙ্গেল চৌকি পাতা আছে। লাইব্রেরিতে চৌধুরী স্যারের প্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছুই আছে। এরকম বইপাগল লোক খুব কম দেখা যায়। - আচ্ছা, সেইরাতে তিনি কোন বইটা পড়ছিলেন? - এটা ঠিক বলতে পারবো না, তবে খাটের বালিশের কাছে একটা মোটা বই আছে, ওটা হতে পারে। ওখানেই আছে, কেউ হাত দেয়নি। Ralph Ellison এর "The Invisible Man" বইটাই পড়ছিলেন। বালিশের পাশে একমাত্র এই বইটাই আছে। বইয়ের পাতা উল্টাতে গিয়ে একটা জিনিস চোখে পড়ল। হুমম, খুনি মনে হচ্ছে ভুল করে প্রমাণ ছেড়ে গেছে। আমি সাথে সাথে আমার এস পি বন্ধুকে ফোন করে বিষয়টা জানালাম। সিগারেট কেনার ছুতোয় বাড়ির বাইরে এসে ডায়েরি আর বইটা বন্ধুকে দেখালাম আর বইটা ল্যাবে পাঠাতে বললাম। এস পি বন্ধু আমাকে আধাঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দেবে বলে আশ্বাস দিল। ফিরে এসে আমি ডায়েরিটা মন দিয়ে পড়তে লাগলাম। দু'সপ্তাহ আগে লেখা "এই শেষ বয়সে এইসব যন্ত্রণা ভালো লাগে না। আমার যা ইচ্ছা তাই করবো।" দশদিন আগে লেখা, "সুমন আমার প্রতি অতিরিক্ত যত্ন নিচ্ছে। যা আমাকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।" একসপ্তাহ আগে লেখা, "আমি সবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি। এটাই ভালো।" এরপরের প্রতিদিন প্রায় একই লেখা...... এর থেকে বোঝা যায় যে উনি বহুদিন ধরেই অবসাদে ভুগছিলেন। রুমা চা নিয়ে এসেছে। আমি আর মিসেস চৌধুরী মুখোমুখি বসে আছি। একটু দূরে বসেছে সুমন। রুমা ঘামছে। বারবার শাড়ির আঁচল দিয়ে ঘাম মুছতে লাগল। আমি চা শেষ করে সিগারেট ধরালাম। কিছু কথা আড়াল থেকে বলতে হয়। সিগারেটের ধোয়া একধরণের আড়াল তৈরি করে। মিসেস চৌধুরীর মুখে হালকা হাসির রেখা। এমনকি হোঁচট খেয়ে পড়ে পা মচকে ফেলেও হাসে। আমি বললাম, - একটা জিনিস কী জানেন? অতি বুদ্ধিমান লোকেও পুরোপুরি নিখুঁতভাবে অন্যায় করতে পারে না। কোন না কোন ভুল করবেই। চৌধুরী স্যারের খুনও খুব নিখুঁতভাবে হয়েছে। আর নিখুঁতভাবে ভুলও ধরা পড়েছে। ভাবতে পারেন! মিসেস চৌধুরী সাবলীলভাবে জিজ্ঞেস করলেন, - কে খুন করেছে? - বলবো। তার আগে বলি কিভাবে খুন হয়েছে। বিগত কয়েকমাস যাবৎ স্যার খুবই মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। সবার থেকে দূরে দূরে থাকতে চাইছিলেন। সবটাই ওনার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছিল। মিসেস চৌধুরী তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, - খুন কিভাবে হল জানতে পেরেছেন? - চৌধুরী স্যার রাত জেগে বই পড়েন এটা খুনির জানা। উনি যে বইটা পড়ছিলেন, সেই বইয়ের প্রতিটা পাতার কার্নিশে খুব মারাত্মক পটাশিয়াম সায়ানাইড দেওয়া হয়। বইয়ের পাতা উল্টানোর জন্য মুখের থুথু আঙ্গুলে লাগানো স্যারের অভ্যাস। এভাবেই স্যার বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছিলেন আর একটু একটু করে বিষ খাচ্ছিলেন। শুধু তাই নয়, এর সাথে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে। রুমা খুব আগ্রহের সাথে জিজ্ঞেস করল, - কে খুন করেছে স্যারকে? - মিসেস চৌধুরী। মিসেস চৌধুরী খুন করেছেন। মিসেস চৌধুরী একটুও চমকালেন না। - আমি কিভাবে বুঝলাম শুনবেন? আপনি অলিভ অয়েল ব্যবহার করেন। চৌধুরী স্যার অলিভ অয়েল ব্যবহার করেন না। আমি তার সব জামাকাপড় শুকে দেখেছি। বরং আপনার ঘর থেকে এই গন্ধ পেয়েছি। আপনি আশেপাশে থাকলে সেই গন্ধ পেয়েছি। আর আমি বই থেকেও অলিভ অয়েলের গন্ধ পেয়েছি। লাইব্রেরিতে সবাই চাইলেই যেতে পারে না, কিন্তু আপনি যেতেন। স্যারের চায়ের সাথে ঘুমের ওষুধ আপনিই মিশিয়ে ছিলেন। যে বইটা স্যার পড়ছিলেন সেই বইয়ের কভারে চায়ের দাগ পাওয়া যায়। রাতে বই পড়তে পড়তে চা খাওয়া স্যারের অভ্যাস। আর মিসেস চৌধুরী চা খান না, তা সবাই জানে। আরোও একটা প্রমাণ, আপনার পা মচকে যাওয়া। আপনার কাজ সেরে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসার সময় দরজায় ধাক্কা খেয়ে আপনি পা টা মচকে ফেলেন। যদিও সবাই জানে ওটা বাথরুমে পড়ে গিয়ে হয়েছে। কিন্তু আপনার ডান পায়ের বুড়ো আঙুল সব গন্ডগোল করে দিল। বাথরুমে পড়ে গিয়ে পা মোচকানো সম্ভব কিন্তু রক্তপাত কিছুটা আশ্চর্যজনক। দরজায় ধাক্কা লেগে বুড়ো আঙুলের নখের গোঁড়া গেল ভেঙে, ছিটেফোঁটা রক্ত বের হল, দরজার কাঠে তার দাগ আছে, আর সেটা যে আপনার তার প্রমাণ ক্র্যাপ ব্যান্ডেজের নীচে আপনার পায়ে লাগানো ব্যান্ডেড। ব্যাস, হিসাব মিলে দুইয়ে দুইয়ে চার হয়ে গেল। এখন খুনের উদ্দেশ্যটা কি বলবেন? কেন খুন করলেন? আর আপনি নিজে থেকেই বা কেন এই রহস্য উদ্ঘাটনের কাজ দিলেন? মিসেস চৌধুরীর চোখের দৃষ্টি টি-টেবিলে রাখা খালি চায়ের কাপের দিকে। স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। কিছু সময় নিয়ে বলতে শুরু করলেন, - অভিষেকের আমাকে বিয়ে করার কারণ ছিল নিজের একাকীত্ব ঘোচানো। আমার কথা ভাবে নি। আমার একজের সাথে সম্পর্ক হয়। আমি অভিষেককে জানাই সবটা। কিন্তু ও মানতে চায়নি। আমাকে বলে ওর মৃত্যুর পর আমি আমার মতো চলতে পারবো, তার আগে নয়। তাই আমি প্ল্যান করি। বাকিটা তো আপনি আগেই বলে দিয়েছেন। কিন্তু আমার প্রেমিককে সব ঘটনা জানানোর পর আমাকে অস্বীকার করে। এবার বলুন আমি কি করবো? তাই আপনি আসাতে আমার কাজ সহজ হয়ে গেল। ঠিক করলাম সবাইকে সবটা জানাতে হবে। অন্যায় করেছি যখন তখন ... খানিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, - আমি ধারনা করেছিলাম সম্পত্তির জন্য খুন করেছেন। কিন্তু ... যাইহোক, পুলিশকে কি আপনি নিজেই সবটা বলবেন নাকি আমি...... - না, আমিই কনফেশ করবো। - আমি একটু স্বস্তি পেলাম। স্যার এবার শান্তি পাবেন। এতক্ষণ স্যার যেন "The Invisible Man" হয়ে আমাদের মাঝেই ছিলেন......

ঝড়

কালবৈশাখীর ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টির আওয়াজ পেয়ে জানলার দিকে তাকাতেই বাইরের ঠান্ডা হাওয়া আর সোঁদা গন্ধের স্বস্তিটা উপলব্ধি করলাম। ছোটবেলায় বৃষ্টিতে ভিজব বলে এক ছুটে ছাদে চলে যেতাম, গান গাইতাম, নাচতাম। এই পাগলামিটা এখনও হয় মাঝে মধ্যে, এক অদ্ভুত মাদকতা আছে প্রথম বৃষ্টির ফোঁটায়। হঠাৎ ভেজা হাওয়ায় ঠান্ডা লাগতেই সম্বিত ফিরল। কালবৈশাখী উড়ে চলে গেছে অন্য কোথাও, যাহ্ আজ আমার আর বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে গান গেয়ে নাচ করা হলোনা, আবার অপেক্ষা করতে হবে নতুন কিছুর জন্য। অপেক্ষা তো এখন করতেই হবে। এখন গোটা শহর, গোটা দেশ, গোটা পৃথিবীটাই তো অপেক্ষার চাদরে মোড়া। এই তছনছের ঝড় থামার অপেক্ষা। ধ্বংসের মুখ থেকে বাঁচার অপেক্ষা। সুস্থ স্বাভাবিক দিনে ফেরার অপেক্ষা। সবুজে ঢাকা পৃথিবীর অপেক্ষা। কালবৈশাখীর পর যেমন চারিদিক শান্ত হয়ে যায় ঠিক তেমন একটা শান্ত পৃথিবীর অপেক্ষায় আমরা সবাই। হয়তো কোনো বিকেলে বৃষ্টির গান গেয়ে নাচ করবো আবার ।।

আগমনী

দেবী মায়ের আগমনে, শারদপ্রাত দিচ্ছে ডাক, দূরে সরে যাক মান অভিমান, হাসি টুকুই নাহয় সবার থাক! মায়ের আসা বছর ঘুরে, কাশের বনে দিচ্ছে ঢেউ; হারিয়ে যাওয়া অনেক কিছুই, আজও ভোলেনি তার সবটা কেউ। শৈশবের ওই হাসির ঝলক, ছেলেবেলার যতসব খেলা; এখন সেসব হারিয়ে গেছে, খুঁজে পাইনা আর মেলা। তবুও তো পুজো আসে, বছর বছর ঘুরে, বড় হওয়ার সাথে সাথে, সেসব গিয়েছে দূরে সরে। মনে আসে ছেলেবেলা, ক্যাপ আর বন্দুক; মনে আসে মেয়েবেলা, সাজসজ্জার সিন্দুক। আসে অনেক রঙিন স্মৃতি, আসে অনেক ভালোবাসা; পুরোনো খারাপ স্মৃতি ভুলে, সবার সাথে আবার মেলামেশা। ভালো কাটুক সবার পুজো, সবাই ভালো থাকে যেনো; ভালোবাসায় থাকুক সবাই, থাকে না যেনো মনের মধ্যে রাগ অভিমান কেনো।।

শহরের ভীড়ে

- দাদা একটা Gold Flake দেবেন। - এই দুপুর গরমে, এখানে, সিগারেটে সুখটান দিতে নাকি কোনো ঝামেলা টামেলা ? - আরে তুই! এখানে! - Expect করিস নি তো ? জানি সেটা। বললি না তো এখানে কেন ? - ওই আর কি, সারাদিনের চাপ, তার মাঝে নিজের জন্য সময় দেওয়া ... এই ... - কিন্তু অপু তুই তো সিগারেট ...... - কোনটাতে বেশি অবাক হোলি ? আমার সিগারেটের নেশা দেখে নাকি মেয়ে হয়ে সিগারেট খাওয়া ? - না সেটা নয়। কারণ জানতে চাই। কেন ? মানে কি এমন হলো যার জন্য ... -বাদ দে। আচ্ছা লাইটার আছে ? - লাইটার নেই , দেশলাই আছে, চলবে ? - সিগারেটটা ধরানোর মতো , আগুন হলেই হবে ! - এই নে - Thanks ... - কারণটা কিন্তু তুই এড়িয়ে যাচ্ছিস। - ধোঁয়ার সাথে সমস্যা গুলো উড়িয়ে দেওয়ার ব্যার্থ চেষ্টা আরকি ! - জীবন লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার মেয়ে তো তুই না। তবে কেন ? - সব যন্ত্রণা থেকে শান্তি পেতেই তোর হাতটা ধরতে চেয়েছিলাম। সেটা বন্ধুত্বের নয়, ভালোবাসার। তুই পারিস নি। বাবা চলে যাওয়ার পর মা'কে ভালো রাখতে গিয়ে সবকিছু ভুলে গেছিলাম। যখন তোকে আঁকড়ে ধরতে চাইলাম তুই হাতটা ছেড়ে দিলি। এরপরেও কি আত লড়াই করা সম্ভব ছিল ? - কাকিমা এখন কেমন আছে ? - মা বাবাকে খুব miss করত, একদিন আমার আড়ালে বাড়ি থেকে রাস্তায় বেরিয়ে যায়। ঠিক সেই সময় একটা গাড়ি এসে ... Hospitalised করতে করতেই সব শেষ। ব্যাস ... এই তো ... - সিগারেটের ফিল্টারটা ফেলে দিল রোহিত। বলল, এবার কি করবি ? একা একা তো জীবনটা কাটানো যায় না। - জীবনটাও জ্বলন্ত সিগারেটের মতোই। একটু একটু করে পুড়তে পুড়তে হঠাৎ যেমন শেষ হয়ে যায় ... - আমাকে একবার সুযোগ দিবি ? কথা দিচ্ছি তোর কোনো কষ্ট হবে না। শুধু একবার ? - সব শেষ হয়ে গেছে already, এখন আর সম্ভব নয়। Feelings, emotions সবকিছুকে গলা টিপে মেরে ফেলেছি, আর ...... - একটু থেমে রোহিত বলে, সিগারেট তো শেষ , এরপর ? - বসে থাকবো, অন্যদিন একাই থাকি, আজকে তোকে পেলাম । - মাঝে মধ্যেই আসিস এখানে ? - হ্যাঁ , প্রায়ই , ব্যস্ত শহর থেকে পালাতে তো পারিনা , তাই সরে আসি , আবার সন্ধ্যে নামলে শহরের ভীড়ে মিশে যাই । - বেশ, ভালো থাকিস। নিজের খেয়াল রাখিস।।

পরোপকারী

10) - এই মেয়ে শোনো, তুমি তো পাড়ায় নতুন এসেছ। শোনো তোমায় বলে রাখি, এই পাড়ায় ছেলেদের নজর কিন্তু খুব খারাপ, বিশেষ করে আমাদের পাশের বাড়ির বাবুন। উফফফ কি ফাজিল। একটু সাবধানে থেকো। সবাই তো আর আমার ছেলে না, সারাদিন শুধু পরোপকার করে বেড়াচ্ছে। - আচ্ছা কাকিমা বলছি কি ওই হলুদ রঙের বাড়িটা কি আপনাদের ? - না না, ওর পাশে আকাশী বাড়িটা। কেন বলতো ? - ওহহহ, আচ্ছা তাহলে ওই বাড়ির ছেলেটা আপনার ? আসলে কাল আমি টিউশন থেকে যখন বাড়ি ফিরছিলাম তখন আপনার ছেলেই আমার হাত ধরে টানাটানি করছিল। তখন আবার পাড়ার সব ছেলেরাই আমাকে আপনার ছেলের কবল থেকে বাঁচালো। বিশেষ করে ওই বাবুন, ও তো আপনার ছেলেকে এক ঘা দিয়েও দিল নাকের উপর। একটু দেখবেন তো নাকটা পুরোপুরি ফেটেছে কিনা ? নাহলে আবার পরোপকারী হতে পারবে না। তাই না!!!

দুর্ঘটনার আস্ত উদাহরণ

7) রমেন বাবুর আজকের দিনের মেয়েদের নিয়ে বড্ড বিরক্তি। আজকের সমাজের মেয়েরা একটু বেশীই স্বাধীনচেতা। ওনার ওখানেই আপত্তি। মেয়ে হয়ে জন্মেছে মানেই তাকে মাথা নিচু করে বাধ্য হয়ে থাকতে হবে, সে হোক কোনো ঠিক বা ভুল কাজ, সবেতেই সমর্থন করতে হবে এমনকি সবটা মুখ বুজে মেনেও নিতে হবে। এই বিষয় নিয়ে বলার পর লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলতেই সোমনাথ বাবু বললেন, আপনার কি আর কোনো স্বচ্ছ ধারণা আছে মেয়ে জাতিকে নিয়ে ? উত্তরে রমেন বাবু বলেন, মেয়েরা যেখানে সেখানেই দুর্ঘটনা, আসলে ওরাই সব ঝামেলার কারণ। সোমনাথ বাবু অনেক ভেবে বললেন, তা অবশ্য ভুল কিছু বলেন নি মশাই। তার প্রমাণ আপনি নিজেই। আপনি নিজেই দুর্ঘটনার আস্ত এক উদাহরণ।।

বাগদেবী

6) শুক্লা পঞ্চমীর মাঘে মাগো তোমার আগমন, আকাশ পথে হংস রথে তাইতো করো গমন। পাড়ার যত দস্যিরা সব বাগদেবীকে রেখে চাঁদোয়ার তলে , মত্ত সবাই সাজাতে মাকে চারিদিক ভরে পুজোর ফুলে ফলে। শ্বেত শুভ্র বসন পরে সেজেছে মা ফুলের মালায়, রকমারি ফুল গয়না আর পলাশ ফুল হাতের বালায়। অতি অল্প পূজার তিথি তাইতো করে স্নান, সকাল বেলা পুজোর পরে অঞ্জলি প্রদান। তিথির সময় রেরিয়ে না যায় তাইতো তাড়াতাড়ি, ঠাকুর মশাই ছোট্ট ছানার দেন যে হাতেখড়ি। চারিদিকে ধূপধূনা আর টোপা কুলের বাহার, পূজা শেষে কেউ ভুলিনা চরণামৃত আর ভোগের আহার। তুষ্ট হয়ে সবার পূজায় বাগদেবী দেন বর " জ্ঞান - বুদ্ধি, সুর - আলোয় ভরে উঠুক ভুবনঘর "।।

আবির ও ইলিয়ানার গল্প

1) সামনেই আসছে বড়দিন, যাকে আমরা বলি ক্রিস্টমাস। শীতকালের খুশির আমেজ শুরু হয় বড়দিনের হাত ধরে, তারপরেই নতুন বছর আসার পালা। সবমিলিয়ে মজা, আনন্দ, হইচই, রমরমা ব্যাপার। এই ছুটি উপলক্ষ্যে আবির এসেছে তার মামার বাড়ি, ব্যান্ডেল। আবির কলকাতায় থেকে পড়াশোনা করছে, বাবা মা মারা যাওয়ার পর থেকেই মামার বাড়িটাই নিজের বাড়ি হয়ে গিয়েছে। আর মামা মামির কোনো সন্তান নেই বলে আবিরকে মানুষ করছে সন্তান স্নেহে। ২৫শে ডিসেম্বর হতে বেশকিছুদিন বাকি আছে এখনো, এর মধ্যেই আবির কাছেপিঠে টুকটাক ঘোরাঘুরি শুরু করে দিয়েছে ওর স্থানীয় বন্ধুদের সাথে। তাদের মধ্যে আবার সবথেকে প্রিয় বান্ধবী ইলিয়ানা। ও খ্রিস্টান, ওর ব্যান্ডেলেই জন্ম, ছোট থেকে এখানেই বড় হয়ে ওঠা। আবিরের থেকে ২ বছরের ছোট হলেও ওদের বন্ধুত্ব দেখে তা বোঝার উপায় নেই। ওদের মধ্যে সবথেকে বড় মিল হল দুজনেই একই প্রকৃতিরর মানুষ, ওরা গোটা পৃথিবীকে জানতে চায়, একসাথে দেখতে চায় সবটা। - আবির, চল না রে, আজ কোথাও ঘুরে আসি দুজনে। - কোথায় যাবি বল ? তুই যেখানে বলবি আমি চোখ বুজেই সেখানে যেতে রাজি। - তুই না সত্যি একটা পাগল। - জানি তো, আর সেটাও তো একজনের জন্য। - কি ?? কার জন্য ?? কোনো মেয়ে টেয়ে না তো ?? দেখ ওসবের চক্করে ভুলেও পড়িস না। - কেন যদি কারোর জন্য পাগল হই মন্দ কি ??? - কিছুই না, তবুও সবাইকে দেখি তো, প্রেম টেম করে, তারপর ধোকা খেয়ে বিরহী হয়ে ঘুরে বেড়ায়। হা হা হা........ -আচ্ছা তুই চল এক জায়গায়, তোকে আমার ভালোবাসার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো আজ। - কি বলছিস ? জল এতদূর ?? তাও আবার আমাকে ফাঁকি দিয়ে ??? চল চল এবার তো যেতেই হবে, তুই কাকে এতদিন আমার নজর থেকে বাঁচিয়ে রাখলি, তাকে তো দেখতেই হচ্ছে !!!! ইলিয়ানা ওর স্কুটিটা নিয়েই বেরোলো, আর আবির ওর পেছনে লাগা শুরু করলো। - হে ভগবান বাঁচিয়ো আমায়, কার স্কুটিতে উঠলাম ভুল করে। - ওইই একদম বেশি বকবক করবি না, তাহলে এক্ষুনি স্কুটি থেকে নামিয়ে দেবো। - না না মা, রেগে যাচ্ছো কেন ? আমি তো মজা করছিলাম...... -তোর মজা আমি বার করছি দাঁড়া তুই, হতচ্ছাড়া...... -আচ্ছা আচ্ছা শোন, তুই পরে মজা দেখাস, আপাতত একটু side কর স্কুটিটা। এখানেই আসতে বলি ওকে। - আরেব্বাস, "ওকে" !!!! দেখবো সেই হনুমতি কে !!! হুহহহহহহ.... -এই চুপ করতো। - আচ্ছা চুপ। বেশ কিছুক্ষন পর..... - ইলি (ইলিয়ানা) শোন..... বলেই মাঝ রাস্তায় আবির ওর হাত দুটো ধরে, হাঁটু গেড়ে বসে সবার সামনে চেঁচিয়ে বলে উঠলো - I Love You, I want to marry you....... ইলিয়ানা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো। - ভালোবাসিস, সেই কথা জানাতে এত দেরি করলি কেন ? আমি তো সেই কবে থেকে তোর অপেক্ষায় ছিলাম। প্রায়ই ভাবি এই বুঝি আবির বলবে ওর মনের কথা, এই বুঝি আবির জানাবে ও আমায় কত্তটা ভালোবাসে। ইলিয়ানার কথা শুনে আবির কিছুক্ষণ হাআআ করে তাকিয়ে থাকার পর বলে, - তার মানে তুইও আমায় ভালোবাসিস ? এতদিন বলিসনি কেন শয়তান ? - আমি কখোন বললাম যে আমি তোকে ভালোবাসি !!! হা হা !! আমি তোকে ভালোবাসি না রে আবির, in fact কখনো পারবোও না, কারন জিগেস করিস না। সেটা আমি নিজেও জানি না। নে নে এবার ওঠ দেখি, রাস্তায় সবাই দেখেছে তোকে। হা হা। - এসবের মানে কি !! তুই কি মজা করছিস আমার সাথে ? - এসবের কোনো মানে নেই, বুদ্ধু একটা। উফফ নে এবার চল। বাড়ি যাই। - আচ্ছা ! চল এখন, কিন্তু আমিও বলে দিলাম আমাকে ভালো একদিন তোকে বাসতেই হবে ইলি। - হুম সে না হয় দেখা যাবে। ক্রিস্টমাস এল, যাকে বলে বড়দিন। ইলিয়ানার গ্র‍্যান্ডমা (ঠাকুমা) কেক,পেস্ট্রি কত কি বানিয়েছে। সেসব খেতে হবে, চার্চ-এ যেতে হবে, ঘুরতে হবে কত প্ল্যান আবিরের। আর সবটাই ওর ইলি-কে ঘিরে। চার্চ থেকে বেড়িয়ে আবির ইলিয়ানা-কে নিয়ে কাছে পিঠেই ঘুরতে গেল। সেখান থেকে ফেরার পথে ঘটে এক দুর্ঘটনা। ব্রেক ফেল করা এক মারুতিকে সাইড দিতে গিয়ে ওদের স্কুটিটা ল্যাম্পপোষ্টে গিয়ে ধাক্কা খায়।ইলিয়ানা ছিটকে যায় বেশকিছুটা দূরে আর আবির স্কুটির সাথেই লেপটে আছে। চলতি পথের লোকজন ধরাধরি করে ওদের কাছেই এক নার্সিংহোম-এ নিয়ে যায়। ইলিয়ানার মাথায় চোট লেগেছে। স্ক্যান না করলে বোঝা যাবে না মাথার চোট কতটা গভীর। আর আবির !!! আবিরের অবস্থা ঠিক কেমন, সেটা বলা মুশকিল। খবর পেয়ে আবিরের মামা মামি আর ইলিয়ানার গ্র‍্যান্ডমা এসেছে। কিছুক্ষণ বাদে ডাক্তার এসে জানায়, আবিরকে বাঁচানো গেলেও আবিরের চোখ দুটো...... অপারেশন করতে হবে, তাহলে যদি ওর দৃষ্টি আবার ফেরানো যায় !!! আবিরের মামা বলে, - অপারেশন করুন, যত টাকা লাগে দেবো আমরা। ডাক্তার জানায়, - কথাটা টাকার নয়, কথাটা আই ডোনার-এর। আমাদের কাছে এমন কেউ চেনা জানা নেই, যে আই ডোনেট করবে। আপনাদের হাতে চারদিন সময় আছে, যদি কোনো দয়ালু মানুষ থেকে থাকে আমাদের জানাবেন। আর আমরাও দেখছি যদি তেমন কেউ থাকে। ডাক্তারের কথা সবাইকে এক গভীর চিন্তায় ফেলে দিল। ভাবতে ভাবতে দুদিন কেটে গেল। এরকম কাওকেই পাওয়া গেল না। অন্যদিকে ইলিয়ানার দিকেও তাকানো যাচ্ছে না, স্ক্যানে ধরা পড়েছে ওর চোটও মারাত্মক। সময় যত এগিয়ে আসছে, সকলের চিন্তা তত বাড়ছে। ইলিয়ানা আগের চেয়ে একটু ভালো। কিন্তু এর মধ্যেও ও ভাবছে ওর জন্যই হয়তো আবিরের এই অবস্থা। কিন্তু এই অবস্থার জন্য যে কেউই দায়ী নয়। আবিরের মামার ফোনে হঠাৎ ডাক্তারের ফোন এল, - হ্যালো, আবিরের মামা বলছেন ? Good news আছে। আবিরের চোখের জন্য একজন ডোনার পাওয়া গেছে। কালকেই আমরা অপারেশন করবো, আপনারা তাড়াতাড়ি চলে আসবেন। - হ্যাঁ হ্যাঁ, নিশ্চয়। ভগবানকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবিরের মামা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। পরেরদিন অপারেশন ভালোভাবেই হল, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সেই ডোনার কে ? কে আবিরের এত বড় উপকার করলো ? আবির ওর দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার আনন্দে একসময় এসব প্রশ্ন চাপা পড়ে গেল। দু'দিন পর আবিরকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার ইলির খোঁজও করেছে ও। কিন্তু যেহেতু ইলিও অসুস্থ তাই আর আসতে পারেনি। নতুন বছর পড়তে মাঝে আর মাত্র একটা দিন। আবির সুস্থ বোধ করছে বেশ। তাই এরই মধ্যে প্ল্যান করে ফেলেছে, নতুন বছরের প্রথম দিনটা দুজনে একসাথেই কাটাবে। কিন্তু আবির তো এসে থেকে একবারও ইলির সাথে দেখাও করেনি, কথাও বলেনি। একবার খোঁজ নিতে হবে। আবির ইলির ফোনে ফোন করল, কিন্তু ফোনটা ওর গ্র‍্যান্ডমা ধরলো। - হ্যালো আবির, কেমন আছো my child ? - গ্র‍্যান্ডমা এখন ভালো আছি, বলছি শোনো না ইলি কোথায় ? ওকে একটু ফোনটা দাও না, কতদিন ওর সাথে দেখা হয়নি, কথা হয়নি। - ওকে তো এখন ফোন দেওয়া যাবে না আবির, ও আমাকে বলেছে ও তোমার সাথে একেবারে নতুন বছরের শুরুতে দেখা করবে। ততক্ষন তো তোমায় wait করতেই হবে ! - তার মানে এখনো একটা দিন ? আচ্ছা এগুলো কি পাগলামো বলোতো ?? আচ্ছা বেশ আমি 1st জানুয়ারি ওর সাথে দেখা করবো। নতুন বছর শুরু হওয়ার সাথে সাথেই আবির অধৈর্য হয়ে ওঠে, ইলির সাথে কখন সে দেখা করবে সেই কথা ভাবতে ভাবতে। রাত ১২ টা বাজার সাথে সাথে সাথেই আবির ইলিয়ানাকে massage পাঠায় কিন্তু ওপার থেকে কোনো reply আসেনি। সকাল হলে ইলিয়ানার গ্র‍্যান্ডমা আবিরকে ফোন করে জানায় যে সে আবিরের বাড়ি এসে আবিরকে নিয়ে যাবে একজায়গায়। কথা মতো সেরকমই হল, আবির ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ। ইলির সাথে দেখা করবে, তার জন্য এতকিছুর কি প্রয়োজন ? - গ্র‍্যান্ডমা আমি ইলির সাথে দেখা করতে চাই, ওর সাথে একটু কথা বলতে চাই। ৬ দিন ওকে না দেখে, না কথা বলে আর থাকতে পারছি না। Please try to understand. - এসো আবির, আমার সাথে এসো। এই বলে আবিরকে একটা কবরখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। - আমাকে এখানে আনলে কেন ? - এই card টা তোমার জন্য ইলি পাঠিয়েছে। Card টায় যা লেখা ছিল, তা দেখে আবির পুরো shocked, এসব কি !!! " Dear my Love, এই চিঠিটা যখন পাবি তখন হয়তো আমি আর থাকবো না। তুই জানতে চেয়েছিলিস আমি তোকে ভালোবাসি কিনা ? বিশ্বাস কর তোকে খুব ভালোবাসি রে, নিজের থেকেও বেশি। কিন্তু তোকে কখনো বলতে চাইনি। তোকে আমি সবসময় happy দেখতে চেয়েছি। তুই ভালো থাক সেটাই চেয়েছি। তাই যখন জানতে পারলাম আমার আমার ব্রেইন টিউমার, তখনই তোর প্রতি আমার feelings গুলোকে একটু একটু করে কমিয়ে নিতে চেয়েছি, কিন্তু পারিনি রে, কোনোদিন হয়তো পারবোও না। সেদিন আমি তোকে বলতে পারিনি, তোকে ভালো না বাসার কারণ কিন্তু এই চিঠিতে বলে দিলাম। কথা দিয়েছিলাম তোকে happy রাখবো, তাই আমার ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে সেই কথা রাখার জন্য তোর চোখ আমি ফিরিয়ে দিলাম, যা একদিন আমার জন্যই প্রায় হারিয়ে ফেলছিলিস। তোকে আমি চিরকাল ভালোবাসবো, এভাবেই। কথা দিলাম, তোর সাথেই থাকবো। ভালো থাকিস, আর একদম আমায় miss করবি না তাহলে আমি খুব কষ্ট পাবো। Love you আবির। গোটা দুনিয়া আমরা একসাথেই দেখবো, কথা দিয়েছিলাম। - From your ইলি " আবির ওর সামনের সমাধির দিকে তাকালো, দেখলো তাতে লেখা " Abir's Ili " আকাশের দিকে তাকিয়ে আবির বললো, - যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস ইলি, সত্যি তোর থেকে বেশি কখনো কেউ আমায় ভালোবাসতে পারবে না, কক্ষনো না। হয়তো আমার ভালোবাসার মানুষগুলো এভাবেই আমায় বারবার ফাঁকি দিয়ে চলে যেতে চায়।

Reach Us Through

We have dedicated and hardworking people always ready to help.